Loading...
The Financial Express

‘বাড়িত যাইগা, লকডাউন শেষ অইলে আমু’

| Updated: April 13, 2021 19:24:40


ফাইল ছবি: এফই ফাইল ছবি: এফই

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ‘কঠোর লকডাউনের’ আগে শিথিল ‘লকডাউনে’ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও মহাসড়কে দেখা যাচ্ছে যানবাহনের ভিড়। ঢাকা ছাড়তে চাওয়া মানুষের চাপই এই ভিড় তৈরি করেছে।

সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা ছাড়তে চাওয়া মানুষদের ভিড় দেখা গেছে বহির্মুখগুলোতে। নিয়ম না মেনে কিছু বাসও চলতে দেখা গেছে। তবে বাস না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, কভার্ডভ্যান, পিকআপভ্যানে চেপে বসেছিলেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। যাতে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করা হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বুধবার থেকে ‘কঠোর লকডাউনের’ ঘোষণা এসেছে। পরবর্তী এক সপ্তাহ অফিস, আদালত থেকে শুরু করে সবই থাকবে বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘর থেকে বের হতেও বারণ করা হয়েছে।

এই ঘোষণা আসার পর থেকে ঢাকা ছাড়ার মিছিল বড় হতে দেখা যায়।

সোমবার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাস ও মিনিবাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এসব বাস টার্মিনাল থেকে নয়, ছাড়ছিল যাত্রাবাড়ি, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড ও চিটাগাং রোড থেকে। এসব বাসের পাশাপাশি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাকেও অনেক মানুষকে দেখা গেছে।

সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় সোমবার সকাল থেকেই সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোডসহ রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোয় যানজট ছিল।

সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের যাতায়াত পরিবহনের একটি বাসকে যাত্রী নিয়ে রওনা হতে দেখা যায়।

বাসের হেলপার আইনুল হক বলেন, “মানুষের কাম-কাজ নাই। ঢাহা (ঢাকা) থাইক্কা কী করব? এর লাইগ্গা বাড়ির দিকে যাইতাছে।”

যাত্রীদের ভিড় কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সকালে কয়েকটা গাড়িতে অনেক ভিড় হইছে। বিকালে আরও ভিড় বাড়ব।”

দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আনন্দ পরিবহনের একটি বাস রায়েববাগ থেকে ঘুরিয়ে যাত্রী তুলছিল। এই বাসের হেলপার রুবেল জানান, বাসটি চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাবে।

লকডাউনের মধ্যে কীভাবে বাস চালাচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাস্তায় কয়েক জায়গায় কিছু টাকা দেওয়া লাগব। এমনে হয়ত যাওন যাইব। দেখি চেষ্টা কইরা।”

একটি পিকআপভ্যানে যাচ্ছিলেন কয়েকজন। সাইনবোর্ডে ট্রাফিক সিগন্যালে কথা হয় এর আরোহীদের সঙ্গে। তারা জানান, সবাই কুমিল্লা যাবেন। এই পিকআপভ্যানটি যাবে মদনপুর পর্যন্ত। সেখান থেকে অন্য বাহনে করে যার যার গন্তব্যে যাবেন।

পিকআপে থাকা কুমিল্লার গৌরীপুরের আবদুস সোবহান জানান, কারওয়ানবাজারের একটি আড়তে কাজ করেন তিনি। লকডাউনে আড়ত বন্ধ থাকবে তাই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

“মদনপুর নাইম্মা দেখি বাস পাই কি না। বাস পাইলে বাসে যামু, নাইলে সিএনজি, রিকশা… কিছু না পাইলে হাইট্টা যামুগা।”

রাজধানীর বিভিন্ন বাস চিটাগাং রোড পর্যন্ত চলাচল করে। অনেকে এসব বাসে চিটাগাং রোডে এসে অন্য যানবাহন ধরছিলেন অনেকে।

বাসের অপেক্ষায় থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের আবুল কালাম জানান, তিনি চিটাগাং রোড এলাকায় দিনমজুরের কাজ করেন। লকডাউনে সব বন্ধ থাকবে, তাই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

“থাইক্কা লাভ নাই। এর চেয়ে বাড়িত যাইগা। লকডাউন শেষ অইলে আবার আমু।”

চিটাগাং রোড এলাকায় দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য জানান, সোমবার সকাল থেকেই এই সড়কে যানবাহনের ভিড়। বিভিন্ন যানবাহনে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে।

“যে পরিমাণ মানুষ ঢাকা শহর ছাড়ছে লকডাউনের সময়, ঢাকা শহরে খুব বেশি মানুষ থাকবে না। ফাঁকা হয়ে যাবে।”

মহাসড়কে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের আধিক্য দেখা গেছে।

একটি মাইক্রোবাসে করে চাঁদপুরের মতলব যাচ্ছেন আট তরুণ। তারা জানান, শ্যামপুরের একটি কারখানায় কাজ করেন তারা। লকডাউনের সময় সেই কারখানা বন্ধ থাকবে।

এদের একজন ইকবাল হোসেন জানান, সবাই মিলে মাইক্রোবাস ভাড়া করেছেন।

“বাস পাওয়া যায় না। মাইক্রোবাস চলতে কোনো সমস্যা নাই। এজন্য এই গাড়ি নিছি।”

গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের নারায়ণগঞ্জ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সুত্রধর সোমবার রাতে জানান, সোমবার সকাল থেকে কিছু বাস চলাচল করেছিল। তবে দুপুরের পর কোনো বাস চলতে দেওয়া হয়নি।

“এখন দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ। এ কারণে যেসব বাস বের হয়েছিল সেগুলো আমরা মেঘনা সেতু থেকে ফেরত পাঠিয়েছি। দুপুরের পর আর কোনো বাস চলাচল করেনি।”

ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলেও মানুষ যাচ্ছেন বলে রোববার রাত থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ ছিল। সোমবার সকাল থেকে সারাদিনই এই সড়কে যানবাহনের মোটামুটি ভিড় ছিল।

এই মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও কভার্ডভ্যান, বিভিন্ন পণবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারে করে মানুষকে যেতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে টাঙ্গাইলে জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক এশরাজুল হক বলেন, মহাসড়কে অন্যান্য দিনের চেয়ে পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে আইন অমান্য করে যেসব যানবাহন চলছে তাদের আইনের আওতায় এনে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলগামী গাড়ির ভিড়ে চাপ বেড়েছে শিমুলিয়া ঘাটে। পারাপারের জন্য কয়েকশ গাড়ির লাইনও দেখা গেছে।

শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক সাফায়েত হোসেন বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজারের ফেরি বহরের ১৬ ফেরির মধ্যে ১৩ থেকে ১৫টি ফেরি পারাপার করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

লঞ্চ বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রীকে আবার ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে পদ্মা পার হতে দেখা গেছে। কিছু স্পিডবোটও চলছিল।

Share if you like

Filter By Topic