logo

মাছ ধরার বিরোধ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনে গড়াল

এফই ডেস্ক | Friday, 7 May 2021


ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে সামান্য মাছ ধরার দাবি নিয়ে বিতর্ক থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনে গড়িয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রায় এক লাখ আট হাজার লোকের বসবাস ব্রিটেনের জার্সি দ্বীপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হুমকিও দিয়েছে ফ্রান্স। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তবে জানিয়ে রাখা ভালো, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা একেবারেই ক্ষীণ। তবে এই উত্তেজনা দুই দেশের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে, যা ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিশ্বে চলমান জটিলতার একটি ইঙ্গিত।

যারা বিষয়টি ঠিকঠাক ধরতে পারছেন না, আসুন একটু দেখে নিই।

ফ্রান্সের উত্তরপশ্চিম উপকূলের ১৪ মাইল দূরে জার্সি দ্বীপটির অবস্থান। এটা জার্সি যুক্তরাজ্যের অংশ না হলেও ব্রিটিশরাজের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এর নিজস্ব আইনসভা ও বিচার বিভাগ আছে। তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটেন ও ফ্রান্স কি যুদ্ধাবস্থায়?

জার্সির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ান ফ্রস্ট্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের দ্য ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, ব্রিটেন ‘নিশ্চিতভাবেই ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে যাচ্ছে না।’

তাহলে এতো বড় সংকট কেন? কারণ, যুদ্ধজাহাজের আনাগোনা। মাছ ধরার নিবন্ধনের মত সামান্য বিষয় থেকে এমন বিবাদ ও তার প্রতিক্রিয়ায় ‘সামান্যতম’ সামরিক তৎপরতার আভাসও আসলে বড় প্রতিক্রিয়া হিসেবে গণ্য।

কী কারণে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে এলো? এর শুরুটা আসলে ব্রেক্সিটের হাত ধরে।

দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অধীনে কয়েক দশক ধরে ফরাসি জেলেরা জার্সির জলসীমায় মাছ ধরে আসছে। কিন্তু জানুয়ারিতে ব্রিটেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচ্ছেদের পর নতুন বাণিজ্য চুক্তির অধীনে গত সপ্তাহে জার্সি মাছ ধরার পরিমাণ বেঁধে দিয়ে তার জলসীমায় ফ্রান্সের জেলেদের মাছ ধরার নতুন শর্ত কার্যকর করে।

এর জবাবে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ব্রেক্সিট চুক্তির বরখেলাপ করার অভিযোগ তোলেন ফ্রান্সে কর্মকর্তারা। ফ্রান্সের ভূখণ্ড থেকে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে যুক্ত ওই দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে এক কর্মকর্তা এ সপ্তাহে হুমকিও দিয়ে বসেন।

বিক্ষুব্ধ ফ্রান্সের নৌযানগুলোও দ্বীপের রাজধানী সেইন্ট হেলিয়ারের একটি বন্দরের প্রবেশমুখ আটকে দেবে বলে হুমকি দিয়ে বসে।

এর জবাবে বুধবার ‘সতর্কতামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে সেখানে দুটি ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দপ্তর।

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সও ‘নৌ চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে’ এবং ‘সাগরে জানমালের সুরক্ষা দিতে’ দুটি জাহাজ টহলে পাঠায় বলে জানিয়েছেন ইংলিশ চ্যানেলের দায়িত্বে থাকা ফরাসি সমুদ্র চলাচল কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র।

সামান্য বিষয় থেকে ‘বড় বিবাদে’ মোড় নেওয়ার মতো ঘটনাটি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে বেশ নাটকীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটের শীর্ষ খবর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এই ঘটনা।

ব্রিটিশ অর্থনীতিতে মৎস্য শিল্পখাতের খুব বেশি অবদান না থাকলেও এর সঙ্গে আবেগ জড়িত এবং প্রতীকী তাৎপর্য বেশ অর্থবহ। সেকারণেই বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ; ব্রেক্সিট আলোচনায় বড় বাধা ছিল।

ব্রেক্সিট সমর্থক মৎস্য শিল্পখাতের অনেকেই মনে করেন, তাদের আরও বেশি মাছ শিকারের অধিকার আছে। ব্রেক্সিট-পূর্ব অবস্থায় তাদের অনেকেই নিজেদের বঞ্চিত ভাবতেন। তারা মনে করতেন, ব্রিটেনের জলসীমায় মৎস্যসম্পদ অন্য দেশের সঙ্গে অনেক বেশি ভাগাভাগি করতে হচ্ছে।

অনেকে অবশ্য এই ‘নাটকীয়তাকে’ অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন। সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ক্রেইগ মারি টুইটে লিখেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না গানবোট পাঠানো… কী পরিমাণ বোকামি, প্রতিটি ধাপে!”

১৯৯০ এর দশকের শুরুতে মারি মৎস্য সম্পদ আহরণের চুক্তি নিয়ে মধ্যস্ততা করেছিলেন।