logo

টিকা: অনিশ্চিত দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে মেলেনি উত্তর

REUTERS | Tuesday, 11 May 2021


বাংলাদেশে দুই মাসের ব্যবধানে করোনাভাইরাসের টিকার দুই ডোজ দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু টিকার ঘাটতিতে অনেকের দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা

মহাখালীর বাসিন্দা এমএম ইসলাম টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি। এখন খবর আসছে মজুদ প্রায় শেষ। তাহলে তার দ্বিতীয় ডোজের কী হবে?

তার মত অনেকেই এখন টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। এদের একটি বড় অংশ প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন মার্চের শেষভাগে। এখন দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস কবে পাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলছে, এ পর্যন্ত দেশে যত মানুষকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মত মজুদ হাতে নেই। ঘাটতি প্রায় ১৫ লাখ ডোজের মত।

সেই ঘাটতি পূরণে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে, কিন্তু নিশ্চয়তা মেলেনি। 

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ৮ থেকে সপ্তাহ পর দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ।

এখন টিকা সঙ্কটের মধ্যে প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে সময়মত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। তিনি তাকিয়ে আছেন ‘ভাগ্যের’ দিকে।

“আমরা ভারত ছাড়াও অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যেখানে অক্সফোর্ডের টিকা মজুদ আছে, সেসব জায়গায় আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করছি। চিঠিপত্র দেওয়া হচ্ছে। ভাগ্য ভালো হলে আমরা তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।”

টিকার জন্য ভারতকেও প্রতিনিয়ত ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের হাতে আরও এক মাস সময় আছে। দেখি এই সময়ের মধ্যে আমরা টিকা আনতে পারি কি না।”

টিকার অংক

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে এই টিকা দেশে আসার কথা।

জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি চালানে টিকা এসেছে ৭০ লাখ ডোজ। ভারত সরকার দুই দফায় উপহার হিসেবে দিয়েছে আরও ৩২ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে টিকা এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে গণটিকাদান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। রোববার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৮৬ জন।

সব মিলিয়ে মোট ৯৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। এই হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা থাকে আর আট লাখ ৮৩ হাজার ৯১৪ ডোজ।

প্রথম ডোজ পাওয়া ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ জনের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ ডোজ টিকা দরকার। সে হিসাবে ঘাটতি থাকছে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ ডোজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, টিকার পরিবহন, টিকাদানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মোট টিকার ১ শতাংশ নষ্ট হবে বলে ধরে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে টিকার মজুদ আরও এক লাখ ডোজের মত কমে যায়।

দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা নেওয়া যাবে?

ভারত থেকে টিকা আসা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়েছে আগেই। এখন প্রথম ডোজ পাওয়ার সবার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় সামনে আসছে নানা রকম প্রশ্ন।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কেনা টিকা হাতে না পেয়ে সরকার এখন মরিয়া হয়ে অন্য উৎস থেকে টিকা খুঁজছে। এরইমধ্যে রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি এবং চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের বিবিআইবিপি-সিওরভি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এখন অনেকেই জানতে চাইছেন, প্রথম ডোজে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা নেওয়া যাবে কি না।

এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিসিডির লাইন ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের একটি কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ করছে।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড।

“কমিটি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। কারণ এসব বিষয় নিয়ে কোনো ডেটা নাই, কোনো রেকমেন্ডেশন নাই। বড় বিষয় হচ্ছে, আমাদের কাছে তো টিকাই নাই।

“যখন (অন্য) টিকা আসবে, তখন প্ল্যান করা হবে, কমিটি তখন সিদ্ধান্ত নেবে যে টিকা মিক্স করা যাবে কি না।”

তবে এক ব্যক্তিকে দুই ধরনের টিকা দেওয়ার ‘আইডিয়া’ নিয়ে খুব একটা আশাবাদী না আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।

সোমবার তিনি বলেন, প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য কোম্পানির টিকা কার্যকর কি না- তা এখনও প্রমাণিত না।

“কাজেই দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দিতে হবে। অন্য টিকার সঙ্গে মিক্স করা যায় কি না সেটি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, ফলাফল পাওয়া যায়নি।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন পর্যন্ত একই সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ, প্রথম ডোজে যিনি যে টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেটাই নেবেন।

টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা ব্যক্তিদের আরেকটি প্রশ্ন হল, কতটা দেরি এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হল, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দুই ডোজ আট থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

সেই উদাহরণ টেনে ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলছেন, যাদের আট সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ছিল, তারা আপাতত তা না পেলেও ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই’। আরও চার সপ্তাহ তাদের হাতে থাকছে।

আর ডা. মুশতাক বলছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা একেবারেই আসবে না- এমনটা ভাবার কারণ নেই।

“মাসখানেক পর পেলেও দ্বিতীয় ডোজ যাদের প্রাপ্য, তারা দিতে পারবেন। এই টিকা প্রথম ডোজের পর তিন মাস অপেক্ষা করাই যায়।”