logo

এনবিএফআই নিয়ন্ত্রণে কঠোর হলো বাংলাদেশ ব্যাংক

তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ নিষিদ্ধ


সিদ্দিক ইসলাম | Sunday, 19 September 2021


ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া কঠোর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জন্য ঋণ বা লিজের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ মাত্র তিনবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান যে, ঋণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উক্ত খাতে ঋণ সংক্রান্ত কার্যক্রমে অনেক অনিয়ম ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলার থেকে জানা যায়, এনবিএফআইগুলো রিকুইজিট ডাউন পেমেন্ট গ্রহণের এক মাসের মধ্যে ঋণ বা লিজ পুনঃতফসিলিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বকেয়া কিস্তিগুলোর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ অথবা ঋণ বা লিজের পুরো অর্থের ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তার নগদ পরিশোধের উপর ভিত্তি করে প্রথম পুনঃতফসিলিকরণ আবেদন বিবেচনা করা হবে।

দ্বিতীয় পুনঃতফসিলিকরণ আবেদনের জন্য বকেয়া কিস্তিগুলোর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ অথবা ঋণ বা লিজের পুরো অর্থের ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তা পরিশোধ করতে হবে।

তৃতীয়বারের জন্য বকেয়া কিস্তিগুলোর ন্যূনতম ৫০ শতাংশ অথবা ঋণ বা লিজের পুরো অর্থের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তা পরিশোধ করতে হবে।

দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে নির্দেশনাগুলো নিয়ে বলার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, “এই খাতে ঋণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে আমরা সার্কুলার জারি করেছি”।

সার্কুলারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে তিনবার পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা পাওয়ার পরেও যদি ঋণ গ্রহণকারী তার ঋণ বা লিজ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে স্বেচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই সুবিধা ভোগ করার মাধ্যমে একজন ঋণগ্রহণকারী তার মেয়াদী ঋণ বা লিজের অর্থ পরিশোধ করতে সর্বোচ্চ নয় বছর সময় পাবেন।

সার্কুলার অনুযায়ী, পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা নিয়ে ঋণগ্রহণকারী ব্যক্তি স্বল্পমেয়াদী ঋণ বা লিজ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর পাবেন।

এতে এটাও বলা হয়েছে যে, পুনঃতফসিলিকৃত ঋণ বা লিজের পুঞ্জীভূত সুদ আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা আয় অ্যাকাউন্টে না রেখে ইন্টারেস্ট-সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে জমা করা হবে।

ঋণ ও লিজের সময়সীমা ও কিস্তির পরিমাণ পুনরায় ঠিক করার জন্য এনবিএফআইগুলোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, যার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

সঠিকভাবে পুনঃতফসিলিকরণের নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করার পাশাপাশি পরিশোধ শিডিউল পুনঃতফসিলিকরণ করার কারণে এনবিএফআই-এর ঋণ কার্যক্রমের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয়নি, সার্কুলারে বলা হয়েছে।

এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সভাপতি মোহাম্মত নুরুল আমিন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, “এনবিএফআই খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে এই উদ্যোগ।”

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের এই সাবেক সভাপতি আরো বলেন যে, “পুনঃতফসিলিকরণ পলিসির নিয়ম-কানুন মেনে না চললে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার ফাঁদে পা দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যার জন্য ঋণগ্রহণকারী ব্যক্তি এখন থেকে সতর্ক থাকবেন।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে নিজের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার ভুঁইয়া। তিনি বলেন,  “এটা এনবিএফআই-এ ঋণ শৃঙ্খলা বাড়াতে সাহায্য করবে”।

শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন ফাইন্যান্স সংস্থার (আইআইডিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো জানান যে, ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বা লিজ পুনঃতফসিলিকরণ নীতিমালা প্রায় একই রকম।