logo

সঙ্গীহীন খাঁচাবন্দি জীবনে অস্থিরতা

এফই ডেস্ক | Saturday, 15 May 2021


জাতীয় চিড়িয়াখানার খাঁচাবন্দি জীবনে দীর্ঘদিন ধরে নিঃসঙ্গ সময় কাটাচ্ছে সিংহী মুক্তা, কলি ও একটি স্ত্রী জাতের গণ্ডার।

পুরুষ সঙ্গীর অভাবে এসব প্রাণীর মধ্যে ‘নেতিবাচক পরিবর্তন’ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মিরপুর চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

সঙ্গীহীন প্রাণীদের স্বস্তি দিতে চেষ্টা চালালেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা।

বিশ্বের আট প্রজাতির সিংহের মধ্যে মিরপুর চিড়িয়াখানায় বর্তমানে তিনটি আফ্রিকান প্রজাতির এবং একটি এশিয়াটিক প্রজাতির সিংহ আছে। তাদের মধ্যে পুরুষ কেবল আফ্রিকান প্রজাতির একটি।

২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে চারটি সিংহ নিয়ে আসা হয় মিরপুর চিড়িয়াখানায়। এর মধ্যে দুটি পুরুষ সিংহ সাফারি পার্কে জন্মানো, বাকি দুটি স্ত্রী ‍সিংহ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মানো সিংহী মুক্তার পুরুষসঙ্গী মতি সাফারি পার্কে জন্মেছিল ২০১৫ সালে। জন্মগত ত্রুটির কারণে মতি মারা যায় ২০১৯ সালে, এরপর থেকেই সঙ্গীহীন মুক্তা।

স্ত্রী সিংহ তিন থেকে চার বছরের মধ্যে আর পুরুষ সিংহ চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। একসাথে তারা চারটি বাচ্চা ধারণ করতে পারে, গর্ভধারণের পরে বাচ্চা হতে ৯০ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মতি ‘পরিপক্ক’ না হওয়ায় তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি।

জাতীয় চিড়িয়াখানার ‘জু অফিসার’ গোলাম আজম জানান, সঙ্গীহীন থাকার কারণে মুক্তার মধ্যে আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে।

“আগে স্বতঃস্ফূর্ত থাকত। এখন একা একা থাকে, গর্জন কম করে। নিরিবিলি থাকে। একসাথে থাকলে সময় আনন্দে কাটত, এখন তো সে অবস্থা নাই।”

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আফ্রিকান এবং কক্সবাজার সাফারি পার্কে এশিয়াটিক সিংহ থাকলেও সেখান থেকে ঢাকা চিড়িয়াখানায় আনার মতো পর্যাপ্ত সিংহ নেই। সেজন্য মুক্তার জন্য দেশের বাইরে থেকে পুরুষসঙ্গী আনার পরিকল্পনা ছিল।

গোলাম আজম বলেন, “আমরা চেষ্টা করতেছি ম্যাচিং করে নিয়ে আসার জন্য। মহামারীর কারণে আনতে পারছি না। গত অর্থ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চারটি সিংহ আনার জন্য আমরা টেন্ডার করেছিলাম। মহামারীর কারণে আর আনা যায়নি। এখন নতুন করে আর এ কাজ করা যাচ্ছে না।”

সাফারি পার্ক থেকে সিংহ আনার আগে থেকেই একটি এশিয়াটিক প্রজাতির স্ত্রী সিংহী রয়েছে চিড়িয়াখানায়।

কলি নামের ১৭ বছর বয়সী স্ত্রী এশিয়াটিক প্রজাতির এই সিংহটিও প্রায় চার বছর ধরে সঙ্গীহীন রয়েছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

মিরপুরের এই চিড়িয়াখানায় বর্তমানে গণ্ডার আছে একটি। ২০১০ সালে স্ত্রী ও পুরুষ মিলিয়ে জোড়া গণ্ডারই আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল।

পুরুষ গন্ডারটি ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর তার নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে সঙ্গী হিসেবে ভেড়া দিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় চিড়িয়াখানার বৃহৎ প্রাণী শাখার প্রধান ওসমান গণি বলেন, “যারা আমাদেরকে সাপ্লাই দিয়েছিল, তারা পরে আমাদের বলেছিল, অন্য কোনো প্রাণীর সাথে রাখলে সে ভালো থাকবে। তারপর একটি স্ত্রী ভেড়া দেওয়া হয়েছিল।”

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, “আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে গণ্ডারটিকে সঙ্গী দেওয়ার চেষ্টা করছি। একটা ভেড়া সে গ্রহণ করেছিল। ভেড়াটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে আবার একটা ভেড়া দিয়েছি, মাঝখানে এক বছর গ্যাপ ছিল।

“আমার নলেজে আসার পর আমি আবার একটা ভেড়া এনে কোয়ারেন্টিন করে দেওয়ার পর সে আর এটাকে গ্রহণ করছে না। এখন ভেড়াটাকে অন্য জায়গায় রেখেছি, সপ্তাহে এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা করে একসাথে রাখি। আমরা চেষ্টা করছি, দেখি কিভাবে গ্রহণ করানো যায়।”

তার জন্য স্বজাতীয় সঙ্গী আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মহামারীর কারণে কোনো দেশ তো কো-অপারেট করছে না। আর তারা দিতে চাইলেও পরিবহন ব্যবস্থা নাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার টেন্ডার করে চেষ্টা করতে হবে।”

দীর্ঘদিন সঙ্গীহীন থাকার কারণে গণ্ডারটির মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন আসার কথাও জানিয়েছেন পরিচালক আব্দুল লতিফ।

“আনরেস্ট অবস্থায় আছে। সঙ্গী থাকলে সে মেন্টালি হ্যাপি থাকত। সঙ্গী না থাকলে তো মেন্টালি পিসফুল থাকে না। আগে অনেক শান্ত ছিল, এখন মাঝে মাঝেই বিগড়ে যায়। মারমুখী হয়ে যায়, আমরা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি।”

আফ্রিকান প্রজাতির এই গণ্ডার এর আগে পুরুষ সঙ্গীর সাথে প্রায় তিন বছর থাকলেও একবারও বাচ্চা দেয়নি বলে জানিয়েছেন ওসমান গণি।

আবদ্ধ অবস্থায় থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তা হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

“যখন তারা বনে থাকে তখন স্বাভাবিক প্রজনন হয়। ওদের চয়েজের ব্যাপার থাকে। সব পুরুষ তাদের চয়েজে থাকে না, এসব কারণ হতে পারে।”

চিড়িয়াখানায় অনেক প্রাণীর কমে যাওয়ার পেছনে সঠিকভাবে প্রজনন না হওয়াকেও কারণ দেখালেন ওসমান গণি।

প্রাণীদের প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের টিকে থাকার বিষয়টি আমাদের চিড়িয়াখানাতে এখনও সায়েন্টিফিক ওয়েতে যায়নি। মানুষ দেখবে, আনন্দ পাবে; এসব দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

“সরকার যদি গুরুত্বের সাথে প্রজননের দিকে নজর দেয়, তখন হয়ত এ বিষয়ে আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করা হবে।”