logo

গরমে প্রাণ জুড়ানো কয়েকটি পানীয়

ফরহাদুর রহমান | Wednesday, 23 June 2021


ধরুন, চাকরি বা ব্যক্তিগত কোনো কাজে আপনি বাইরে বের হলেন। কিন্তু বাইরে প্রচণ্ড রোদ। রোদে যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে। আপনার মন চাচ্ছে, দ্রুত বাসায় চলে যেতে। কিন্তু প্রয়োজনের কারণে তা পারছেন না। হঠাৎ সাথের কেউ একজন আপনাকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তৈরী লেবুর শরবত পান করতে দিল। কেমন বোধ করবেন? নিশ্চয় প্রস্তাবটা শুনেই আপনার মনে একটা শীতলতা বয়ে আসবে। যেন, মরুভুমির বুকে এক আঁজলা পানির সঞ্চার করলো কেউ!

ঋতুর হিসেবে দেশে চলছে বর্ষাকাল। তা সত্ত্বেও রোদের যে পরিমাণ তাপমাত্রা, এতে মনে হবে, হয়তো হিসেবের কোথাও ভুল হচ্ছে। হয়তো এখন গ্রীষ্মকালই। এই অতিরিক্ত তাপ কিংবা গরমে শরীর থেকে প্রায় সবারই প্রচুর ঘাম বের হয়। আর ঘামের সাথে শরীর থেকে নানা পুষ্টি উপাদান বের হয়ে যায়। এসব পুষ্টি উপাদান নিরাময়ে আমাদের পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণ পানি ও ঠাণ্ডা পানীয়।

লেবুর শরবত

লেবুতে থাকে ভিটামিন সি। প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত শরীরের ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি-র্যা ডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধেও এটি সহায়তা করে। ভিটামিন সি 'স্কার্ভি' রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে।

আনারসের শরবত

আনারসে আছে নানা পুষ্টি। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম ও ফসফরাস আছে। এসব উপাদান দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কাজ করে। এছাড়াও আনারসে প্রচুর ফাইবার ও অনেক কম চর্বি থাকায় তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্যও বেশ উপকারী।

বেলের শরবত

বেলে থাকে ভিটামিন সি ও এ। গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে করতে ভিটামিস সি বিশেষভাবে কাজ করে। বেলে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এসব আঁশ হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস-অ্যাসিডিটির পরিমাণ কমায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াও ভিটামিন এ চোখের অঙ্গগুলোকে পুষ্টি জোগায়।

ডাবের পানি

এক নিমেষে আপনার ক্লান্তি দূর করতে পান করুন তাজা ডাবের পানি। ডাবের পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আপনার শরীরকে ভেতর থেকে ঠাণ্ডা করে তুলবে। এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানেরও যোগান মেলে।

আম পান্না

পুদিনা পাতা, আমের রস আর বরফের দ্বারা তৈরি করা যায় আম পানা বা আম পান্না। এই পানীয় গরমে স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিও দেবে। অনেকে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে ফেলেন। আম পান্না পান করলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমবে।

আঙুরের রস

আঙুরের রস, মধু আর বরফ একসাথে মিশিয়ে জুস তৈরি করে খেলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। এছাড়াও শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে এ পানীয় বেশ উপকারী।

শসার রস

গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ও ক্যালোরি কমাতে শসা বেশ উপকারী। শসা আর্দ্রতা রক্ষাকারী কম ক্যালোরি সম্পন্ন, উচ্চ আঁশ ও জলীয় উপাদান সমৃদ্ধ ফল। শসায় থাকা আঁশ পেটভরা অনুভূতি আনে। আর এ কারণে প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত খাবারের চাহিদাও কমে যায়।

বিটরুটের শরবত

বিটরুটের শরবত অতিরিক্ত ওজন কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই শরবতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য-আঁশ থাকে। এটি পাচনক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। বিটরুটে ভাল পরিমাণের লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ফোলাট (ভিটামিন বি-৯), পটাসিয়াম ও আঁশ থাকে। পেশির ক্ষয় পূরণে আঁশ সমৃদ্ধ বিটরুট উপকারী।

কমলার রস

কমলায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। কমলার রস ওজন কমাতে সাহায্য করে। বাজারে বিক্রি করা পানীয়ের বিকল্প হিসেবে কমলার রস খাওয়া যায়। কমলা দেহের ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকতেও কমলার রস কাজে আসে।

আমের শেইক

আমে ভিটামিন সি, কে, এ, পটাশিয়াম ও ফোলাট আছে। চিনি ছাড়াই কম ননীযুক্ত দুধের সঙ্গে মিশিয়ে আমের শেইক তৈরি করা যায়। আমের শেইক ক্ষুধা নিবারণ করতে সহায়তা করে। এটা খেলে ত্বক, হৃদপিণ্ড ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। স্বল্প চর্বিযুক্ত দুধ এবং চিনি ছাড়া তৈরি আমের শেইক পান করা আপনার তৃপ্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম।

তরমুজের শরবত

জনপ্রিয় পানীয়ের মাঝে তরমুজের শরবত অন্যতম। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ তরমুজ সুস্বাধু ফল। তরমুজে প্রায় ৯৪ শতাংশ পানি থাকে। এছাড়াও এই ফলে প্রচুর আঁশ থাকে। তরমুজ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, ভিটামিন সি, ইলেকট্রোলাইট ও খনিজ সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি ও আর্দ্রতারক্ষাকারী ফল এটি। এক গ্লাস তরমুজের শরবত অনেকক্ষণ পেটভরা ভাব আনতে সক্ষম। এটি শরীর আর্দ্র রাখে।

এসব ছাড়াও আরো বেশ কিছু পানীয় আছে, যা গরমে ভীষণ আরাম দেয় এবং শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এসবের মাঝে কোল্ড কফি, জিরাপানি, লাচ্ছি, আখের রস, ছাতুর শরবত ইত্যাদি অন্যতম।

ফরহাদুর রহমান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী।

[email protected]