Loading...

লেখা যেভাবে ‘ভালো লেখা’ হয়ে ওঠে

| Updated: May 17, 2021 15:52:31


লেখা যেভাবে ‘ভালো লেখা’ হয়ে ওঠে

অন্তর্দৃষ্টি যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, স্মৃতি কিংবা কল্পনা তখন হাত-পা ছেড়ে বসে আমাদের খুব কাছে। বিনা আপ্যায়নে বয়ান করে ওদের যাবতীয় আলাপ। কেউ তখন ফিক করে হেসে ওঠে, আর কেউ ভেজা হাতে খাতার পাতায় বসিয়ে দেয় কলমের খোঁচা।  

আমরা বোধহয় প্রত্যেকেই নিজের জীবনে ঘটা সুন্দর অথচ বিষাদময়, কিংবা স্ব আনন্দের সব কীর্তন লিখে রাখতে চাই। আবার এ-ও চাই, যেন আমাদের লেখাগুলো পাঠ উপযোগী হয়ে ওঠে।

তাই আজকের এই লেখার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব, একটি লেখা কী কী বৈশিষ্ট্যে আরও প্রাঞ্জল, আরও প্রাণোচ্ছল হবার যোগ্যতা অর্জন করে।

সহজবোধ্যতা

পৃথিবীর সব সহজ ব্যাপারগুলোই সবচে' বেশি সুন্দর হয়। আমরা যা-ই লিখি না কেন, তা যেন সবসময় সহজে অনুমেয় হয়। কারণ, খুব বেশি দুর্বোধ্য কায়দায় লেখা সবাই পড়ে বুঝতে পারে না। একটি লেখা মূলত তখনই প্রশংসার দাবি রাখে, যখন তা সর্বজনীন কৌশলে লেখা হয়। আবার বিষয়টি এমনও নয় যে, আপনি অর্থবোধক বা গভীর মানে রাখা কথাগুলোকে এড়িয়ে যাবেন। বরং, গভীর কথাগুলোকে খুব সহজ অলংকারে সজ্জিত করা গেলে, পাঠক তৃপ্ত হয়।

সরাসরি

একটি লেখাকে আরও বেশি মধুর ও দারুণ করে তুলতে, সরাসরি উপস্থাপন খুব বেশি দরকার। যা বলা প্রয়োজন, তা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে না বলে, মূল প্রসঙ্গে চলে যাওয়া; একজন ভালো লেখকের অন্যতম গুণ।

শব্দজ্ঞান

যেহেতু প্রতিটি শব্দের রয়েছে অনেকগুলো সমার্থক শব্দ, সেহেতু একজন লেখক তার লেখায় বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগ ঘটাতেই পারে। কিন্তু, যে শব্দগুলোর সঙ্গে অধিকাংশ মানুষের সখ্যতা বা সাক্ষাতের পরিমাণ অল্প, সে শব্দ কোনো লেখায় চলে আসলে তা পাঠকের মনোজগতে সুন্দরভাবে প্রভাব ফেলতে বরাবরই ব্যর্থ হয়। আসলে যে লেখক তার লেখায় বোধগম্যতার দুয়ার যত বেশি খোলা রাখে, সে লেখক তত বেশি ভালো লেখক হয়ে উঠতে পারে।

ছোট বাক্য বিধি

একটি যেকোনো লেখার সৌন্দর্য বর্ধনে, ছোট বাক্য অন্যতম সহায়ক হয়। কারণ, একটি বিষয় যখন খুব দীর্ঘ বাক্যে না লিখে ছোটো ছোটো বাক্যে ভাগ করে লেখা হয়, তখন পাঠক তা পাঠে তুমুল আগ্রহ বোধ করে৷ তাই যথাসম্ভব উচিত, যেকোনো বিষয়ই যেন বাক্য আকারে খুব বেশি বড় হয়ে না পড়ে।

পরিমিতিবোধ

একজন লেখক কি সমস্ত গভীর বা জ্ঞানগর্ভ বোধ পুরোটাই উগড়ে দিতে পারেন তার একটি লেখায়? তিনি চাইলে নিশ্চয়ই পারেন। তবে, এক্ষেত্রে সে বিষয়টি না মনে রাখলেই নয়— সব মানুষের বোধগম্যতার ধরন এক হয় না। হয়তো কেউ খুব গভীর কথা চট করে ধরে ফেলতে পারে। আবার কেউ হয়তো অত্যধিক গভীরতার স্রোতে তলিয়ে যায়। ফলে, কখনো কখনো লেখকের মূল ভাষ্যটি খুব গোপনেই প্রাণ হারায়। তাই, লেখক হিসেবে যেকোনো প্রয়োগে পরিমিতিবোধ থাকা অত্যন্ত দরকার। লেখায় যা-ই যোগ করা হোক না কেন, তা যেন পরিমাণে ‘অতিরিক্ত’হয়ে না পড়ে।

বাস্তবতার কাছাকাছি

যা কিছু প্রতিনিয়ত ঘটে অথবা যা কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকে, সেগুলো মূলত বাস্তবতার হাত ধরে হাঁটে। আর আমরা সবাই বাস্তবতার অনন্য এক উদাহরণ। একটি লেখায় যখন বাস্তবতা সত্য হয়ে ফুটে ওঠে, তখন তা খুব সহজেই পাঠকহৃদয়ে ঠাঁই পায়।

প্রাসঙ্গিকতা

একটি লেখার সূচনা পর্ব থেকে অন্তিম বিন্দু পর্যন্ত যদি প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকে, তখন নিঃসন্দেহে তা ভালো লেখার মর্যাদা লাভ করে। শুধু শুধু কোনো লেখা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছে থেকে, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে আনলে; সে লেখার মান সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।

ঘুরেফিরে এক কথা

কোনো লেখায় যখন বারবার একই কথা ঘুরেফিরে আসতে থাকে, তখন তা খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রাণবন্ত হতে পারে না। আর প্রাণহীন কোনো লেখা কখনোই খুব বেশি সুখকর হয় না।

সম্পাদনা

লেখার কাজ শেষ হয়ে গেলেও শেষের এ ব্যাপারটি নিয়ে প্রায় লেখকই খুব বেশি ভোগেন। অনেকে আবার কিছু একটা লিখে ফেলার সঙ্গে-সঙ্গেই, সে লেখার চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমে পড়েন। সম্পাদনা করতে গিয়ে নতুন কিছু যোগ কিংবা বিয়োগ ঘটান। এক্ষেত্রে লেখকের উচিত, মাত্র কিছু অংশ লিখেই তার দিকে পুনরায় না তাকিয়ে শুধু লিখে যাওয়া। এবং পুরোটা লেখা শেষ হবার পর বা দীর্ঘ একটা সময় কেটে গেলে সে লেখাগুলোর দিকে নজর দেওয়া। ফলে, আসলেও কোন জায়গায় ঠিক কী পরিবর্তন প্রয়োজন, তা বুঝতে খুব বেশি সমস্যা হয় না।

একজন লেখক যদি শুধু এটা ভেবে বসে থাকে যে, তিনি যা-ই লিখবেন, তা-ই সব পাঠককে পড়তে হবে, তবে তা মস্ত বড় ভুল। আবার এ-ও সত্য নয়, লেখক পাঠকের রুচি মতো তার লেখা সাজাবেন। পাঠকরাই বরং রুচিমতো খুঁজে নেবেন লেখাগুলোকে। বরং, নিজের সর্বোচ্চ দৃষ্টি খোলা রেখে লেখক লিখে যাবেন তার আপন মহিমায়, উপস্থাপনে আনা দরকার এমন এক জাদুস্পর্শ, যা সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়বে পাঠক থেকে পাঠকের হৃদয়ে, লেখকের উদ্দেশ্যও পাবে নিজের গন্তব্য।

সঞ্জয় দত্ত বর্তমানে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic