Loading...

পেটে যার ভাত নেই, তাকে ঘরে রাখবেন কীভাবে: ফখরুল

| Updated: April 13, 2021 22:21:56


পেটে যার ভাত নেই, তাকে ঘরে রাখবেন কীভাবে: ফখরুল

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ কথা সরকার বললেও তা পরিকল্পনাহীন বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

“যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের খাওয়ার কী ব্যবস্থা করছেন? এই লোকগুলোকে তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই তাকে লকডাউন দিয়ে কী করবেন,” বলেছেন তিনি।

সরকার ঘোষিত লকডাউন শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন, খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় বুধবার থেকে এক সপ্তাহ কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সরকার।

এই সময়ে সব অফিস, আদালত, ব্যাংক, গাড়ি চলাচল সব বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতেও বারণ করা হয়েছে।

ফখরুল বলেন, “সরকারের কোনো সমন্বয় নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই, কোনো রোড ম্যাপ নেই। এই যে সাত দিন দিয়েছে, তার পরে কী হবে?

“এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে দিন আনে দিন খায় মানুষজনে। এটা দায়িত্ব সরকারের যে এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। যেটা সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।”

তাহলে কি লকডাউনের বিরোধিতা করছেন- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “না, আমরা বিরোধিতা করছি না।

“এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি যে একটা অকার্যকর শাটডাউন করছে। হাজার হাজার লোকজন বেরুচ্ছে, হাজার হাজার লোক বাজারে যাচ্ছে। আবার শিল্পকলকারখানা খোলা রাখছে। দেখুন কতটা স্ববিরোধিতা।”

তাহলে কীভাবে লকডাউন সফল করা যায়- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ব্যাপারটা তো সহজ নয়, কঠিন নিঃসন্দেহে। আলাউদ্দিনের চেরাগ কারেও হাতে নেই যে মুহূর্তে ঠিক করে ফেলবেন।”

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এনজিওগুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করলে এই ধরনের লকডাউন সফল করা যায়।

কিন্তু সরকারের সেই উদ্দেশ্যেই নেই বলে মনে করেন ফখরুল।

“আপনি তো এখানে গণস্বাস্থ্যকে টেস্ট কিট তৈরি করতে দিলেন না। নিয়ত যদি ঠিক থাকে সব ঠিক থাকবে। তাদের (সরকার) নিয়তই খারাপ। তাদের নিয়ত হচ্ছে কানাডাতে বাড়ি বানাবে, বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি বানাবে এখান থেকে দুর্নীতি করে।”

‘পরীক্ষাই হচ্ছে না’

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে না বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার বাসায় যারা কাজ করেন, তাদের টেস্ট করানোর জন্য আমি গত তিন দিন ধরে চেষ্টা করছি। তারা প্রত্যেকদিন উত্তরায় একটা সেন্টারে যায়, প্রত্যেক দিন বলে যে, ফরম নাই করা যাবে না। শেষে আজকে ভোর ৬টায় পাঠিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে, যে গেছে তার সিরিয়াল ৫০ নাম্বার। বাকিরা সিরিয়াল পায় নাই। ওই সেন্টারে দেড়শ’র বেশি হয় না টেস্ট।”

“অর্থাৎ এখানে বড় একটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সরকার। জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। টেস্টের সুবিধাও কিন্তু সারা দেশে নাই। ২০টি জেলায় কোনো সুবিধাই নাই, তাদেরকে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে টেস্ট করতে হয়,” বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য বিভাগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজকের পত্রিকায় একটা খবর এসেছে, ১০ মাস আগে এসে এয়ারপোর্টের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাহায্যে যেসব ইকুপমেন্টসগুলো এসেছে, সেসব ছাড় হয়নি। সেখানে তিনশটা ভেন্টিলেটর আছে, সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ করার সামগ্রী আছে।

“স্বাস্থ্য বিভাগের কতটা ব্যর্থ হতে পারে যে, এখন পর্যন্ত সেটা ছাড় করে হাসপাতালগুলোতে পৌঁছাতে পারেনি। এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।”

‘সিন্ডিকেটের হাতে বাজার জিম্মি’

রোজার আগে চাল-সয়াবিন তেল-চিনি-আটা-ময়দাসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই সরকারের সময়ে যে ধরনের লাগামহীন দুর্নীতি চলছে, মূলত তারই ধারাবাহিকতায় লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দুরীকরণের কোনো বিকল্প নাই।”

তিনি বলেন, “এই সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই বিধায় তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে।”

‘বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নের পরিকল্পনা’

ফখরুল বলেন, “মহান স্বাধীনতার দিবসকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটালো সরকার, আমি এটাকে পুরোপুরিভাবে পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে করি। তারা এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করবার আরেক বড় প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।”

হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ-সহিংসতার ঘটনার মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ তুলে এই অভিযোগ করেন তিনি।

“২৬ মার্চ তাদের (সরকার) প্রোভোকেশন ছিল সবচেয়ে বেশি … তারা তৈরি করেছে সিচুয়েশনটা, এখন তারা বিরোধী দলের উপর চড়াও হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। সালথায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।”

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল আছে।

“আজকেও আমি এখানে আসার আগে খবর নিয়েছি- একই অবস্থা। তিনি স্ট্যাবল আছেন। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসাও শুরু হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সবসময় দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে আসছি। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবকে যে তিনি তার দুই-একদিনের কথার মধ্যে একটা জরুরি কথা বলেছেন যে,এই করোনার মধ্যে অবিলম্বে তার পূর্ণাঙ্গ জামিন দেওয়া প্রয়োজন। আমি তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

Share if you like

Filter By Topic