Loading...

পাগলা মসজিদ: দুইশর বেশি মানুষ দিনভর গুনছেন দানবাক্সে পাওয়া টাকা

| Updated: June 19, 2021 20:22:25


পাগলা মসজিদের টাকা গণনা চলছে । ছবি: NUR MOHAMMAD/বিবিসি বাংলা পাগলা মসজিদের টাকা গণনা চলছে । ছবি: NUR MOHAMMAD/বিবিসি বাংলা

প্রতি তিন-চার মাস পরপর দানবাক্স থেকে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায়, বাংলাদেশের এমন একটি মসজিদের আটটি দানবাক্সে গত পাঁচ মাসে জমেছে বারো বস্তা টাকা।

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা বলছেন, সকাল নয়টার দিকে দুই শতাধিক মানুষ সেসব টাকা গুনতে শুরু করেছেন। দুপুর নাগাদ দুই কোটি টাকার বেশি তারা গুনেছেন। বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গণনা চলছিল। খবর বিবিসি বাংলার।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন এই গণনা তত্ত্বাবধান করছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে দুপুরের দিকে যখন বিবিসি বাংলার কথা হয়, তখন পর্যন্ত দুই কোটি ২১ লাখ টাকার বেশি গণনা করা হয়েছে।

নগদ বাংলাদেশি মুদ্রা ছাড়াও দানবাক্সগুলোতে বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ২৩শে জানুয়ারি এই মসজিদের সিন্দুক থেকে দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি অর্থ এবার পাওয়া যাবে।

অবশ্য তিনমাস পরপর দানবাক্সগুলো খোলার কথা থাকলেও এবার খোলা হলো প্রায় পাঁচ মাস পর। শেষবার গত জানুয়ারি মাসেও চার মাস পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল।

মিস ইয়াসমিন বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই বিলম্ব।

শনিবারের অর্থ গণনায় অংশ নিয়েছেন ১২৭ জন ছাত্র, ৫২ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটির ৩৩ জন সদস্য।

পাগলা মসজিদ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে পাগলা মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদ কেন্দ্র করে রয়েছে একটি ধর্মীয় কমপ্লেক্স।

এই মসজিদের গোড়াপত্তনের সময়সীমা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায় না।

তবে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মজিবুর রহমান বলছেন, ''যতদূর জানতে পাওয়া যায়, অনেকদিন আগে একজন পাগলা সাধক এখানে অবস্থান করতেন। পরে তিনি সেখানেই মারা যান। পরবর্তীতে ওইখানে মসজিদ হয় আর সেটার নামকরণ হয় পাগলা মসজিদ।''

মি. রহমান বলছিলেন, মসজিদটিতে মুসলমানদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও দান করেন।

"জনশ্রুতি আছে, এখানে মানত করলে তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। এই কারণে দেখবেন দুই তিনমাস পরপর এখানকার সিন্দুক ভরে যাচ্ছে,'' বিবিসিকে বলছিলেন প্রফেসর রহমান।

বাংলাদেশ সরকারের জেলা তথ্য বাতায়ন বলে পরিচিত ওয়েবসাইটে মসজিদটি সম্পর্কে বলা আছে, "আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। জনশ্রুতি আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন এবং তাঁকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। উক্ত পাগলের মৃত্যুর পর তাঁর সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে তাই কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, সকল র্ধমাবলমবীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত"

মসজিদ থেকে পাওয়া অর্থ যে কাজে লাগানো হয়

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফরিদা ইয়াসমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফ'র আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুক খুলে টাকা গণনা শুরু হয়েছে।

''এখানে একটি এতিমখানা রয়েছে, সেই এতিমখানার খরচ এই টাকা থেকে চালানো হয়। এছাড়া মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এই অর্থে চলে। ক্যান্সার, কিডনি রোগে আক্রান্ত দরিদ্র ব্যক্তিদেরও এই তহবিল থেকে সাহায্য দেয়া হয়। এই বছর এই তহবিল থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক, যারা করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করেছেন, তাদের অনুদান দেয়া হয়েছে'', বিবিসিকে বলেন ফরিদা ইয়াসমিন।

মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দান বাক্সের টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়। সেখান থেকে অনুদান ও সহায়তায় খরচ করা হয়।

Share if you like

Filter By Topic