Loading...

টিকা দিতে গিয়ে কীভাবে পথ হারালো ভারত?

| Updated: May 15, 2021 16:43:14


- রয়টার্স ফাইল ছবি - রয়টার্স ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের শেষ দেখার প্রত্যয় নিয়ে চার মাস আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা ভারত এখন টিকার অভাবে গভীর সঙ্কটে পড়েছে।

অনুমোদন পেয়ে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনে থাকা দুই কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এবং ভারত বায়োটেক প্রত্যাশা বা চাহিদা- কোনোটাই পূরণ করতে পারছে না। ফলে খোদ রাজধানীতে শতাধিক টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বিশ্বে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের যত টিকা উৎপাদন হয়, ভারত একাই তার ৬০ শতাংশের যোগান দেয়। কেবল টিকা নয়, জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনেও শীর্ষে থাকা ভারত বিশ্ববাজারে পরিচিতি পেয়েছে ‘ফার্মেসি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে।

সেই ভারত কী করে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে এমন দুর্দশার মধ্যে পড়ল? বিবিসির নিখিল ইনামদার ও অপর্ণা আলুরি এক প্রতিবেদনে এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

স্নেহা মারাঠির বয়স ৩১, ভারত সরকার তার বয়সীদেরও করোনাভাইরাসের টিকা দিচ্ছে। কিন্তু অনলাইনে সেই টিকা নেওয়ার দিন ঠিক করতেই তার একটা দিনের অর্ধেক সময় লেগে গেছে।

তার ভাষায়, টিকার জন্য নিবন্ধনের কাজটা অনেকটা কুইজ খেলার মত। যে আগে সব প্রশ্নের উত্তর দেবে, সেই জিতবে।

নিবন্ধনের সবগুলো ঘর পূরণ করতে সময় লেগেছিল মাত্র ৩ সেকেন্ড, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তে স্নেহার সেদিনের স্লট বাতিল করে দেয়, কারণ তাদের হাতে আর টিকা ছিলো না।

ফলে ওই তরুণীকে আরেকবার অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য চেষ্টা করতে হয়। বারবার একই ঘটনা ঘটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার নিবন্ধনের চেষ্টা সফল হয়।

ভারতে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী সব নাগরিককে টিকা পেতে কোউইন নামের একটি ওয়েব প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম।

এ অবস্থায় ভারতীয়দের মধ্যে প্রযুক্তি-দক্ষ কেউ কেউ কম্পিউটার সফটওয়্যারে কোড লিখে ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট তৈরি করছেন বলেও খবর আসছে।

স্নেহা মারাঠি কোডিং জানেন না, তবে তিনি সেই ভারতীয় নাগরিকের একজন, যারা ডিজিটাল বৈষম্যের এই দেশেও ইন্টারনেটের সুবিধাভোগী।

আর অন্য ভাগে আছে সেই কোটি কোটি ভারতীয়, যাদের স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই, অথচ টিকা নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র পথ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার ৯৬ কোটি ভারতীয়কে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছে, অথচ সরবরাহের পরিমাণ এর ধারেকাছেও নেই। লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারতের দরকার ১৯২ কোটি ডোজের বেশি।

আরও খারাপ খবর হল, টিকার এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে এমন এক সময়ে, যখন সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত বিপর্যস্ত, এমনকি তৃতীয় আরেকটি ঢেউয়েরও শঙ্কাও করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, দুর্বল পরিকল্পনা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়ন্ত্রিত দাম- এরকম বেশ কিছু বিষয়ে মোদীর সরকার ভুল সিদ্ধান্তই ভারতের টিকাদান কর্মসূচিকে একটি বৈষম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এলোমেলো পরিকল্পনা

ভারত, ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকায় ওষুধের প্রাপ্তি সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কাজ করে আসা বেসরকারি সংস্থা অ্যাকসেসআইবিএসএ এর সমন্বয়কারী আচল প্রাভালার মতে, সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার জন্য বায়না করতে বিলম্ব ছিল ভারত সরকারে প্রথম ভুল।

“ভারত টিকার জন্য প্রাক-অর্ডার দিতে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে, অথচ তারা আরও আগেই তা করতে পারত। আর যে পরিমাণ তারা শুরুতে কিনেছে, সেটাও একেবারে নগণ্য।”

জানুয়ারির শুরুতে দুই কোম্পানির করোনাভাইরাসের টিকা ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি পায়। এর একটি হল অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যেটা সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে, অন্যটি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন।

জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে মোদী সরকার দুই কোম্পানি থেকে প্রায় ৩৫ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে। প্রতি ডোজ টিকা ভারত সরকার পেয়েছে ২ ডলারে, যা বিশ্বে করোনাভাইরাসের টিকার দামের মধ্যে সর্বনিম্ন। কিন্তু ওই টিকা দিয়ে সেদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষকেও টিকা দেওয়া সম্ভব নয়।

ভারত কোভিড মহামারীকে পরাস্ত করেছে- এমন ঘোষণা দিয়ে টিকা কূটনীতিও শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিবেশী দেশগুলোতে তিনি টিকা উপহার পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু মার্চ মাসে ভারতীয় নাগরিকরা যত ডোজ টিকা পেয়েছে, ভারত থেকে রপ্তানি হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এর বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টিকা কেনার অর্ডার দিয়ে রেখেছিল এক বছর আগেই, যখন টিকাগুলো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ছিল।

আচল প্রাভালা বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার আগাম অর্ডার টিকা উৎপাদনকারীদের জন্য একটি বাজারের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। সরবরাহ ও বিক্রির বিষয়ে এক ধরনের পূর্বাভাসও তারা পেয়েছিল। উৎপাদকরা এই নিশ্চয়তা পেয়েছিল যে টিকা তৈরি হয়ে গেলেই অন্তত কয়েকটি দেশের সরকার বড় পরিমাণে কিনবে যত দ্রুত সম্ভব।

যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দ্রুত পদক্ষেপ না নিয়ে ভারত অপেক্ষা করেছিল। শেষ পর্যন্ত টিকার উৎপাদন বাড়াতে ২০ এপ্রিল ভারত বায়োটেক ও সেরাম ইন্সটিটিউটের জন্য ৬১ কোটি ডলারের তহবিল যোগানোর ঘোষণা দেয় মোদী সরকার। ততদিনে ভারত সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ে গেছে।

অল ইন্ডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্কের সহ-আহ্বায়ক মালিনি আইসোলার মতে, বায়োলজিকস কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের প্ল্যান্ট মিলিয়ে ভারতের যে বিপুল উৎপাদন ক্ষমতা ও অবকাঠামো, সেগুলোকে একত্রিত করে সাময়িকভাবে টিকা উৎপাদনের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত না নেওয়াটা ছিল সরকারের আরেকটি বড় ব্যর্থতা।

মাত্র কিছুদিন আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিনটিসহ মোট চারটি কোম্পানিকে কোভ্যাক্সিন উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এপ্রিলের শুরুর দিকেই রাশিয়ায় উদ্ভাবিত স্পুৎনিক ভি টিকার প্রস্তুতকারকরা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ভারতের একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে, যারা এখন রাশিয়ার টিকা উৎপাদন করার জন্য প্রস্তুত।

দামেও হেরফের

মালিনি আইসোলা বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একক ক্রেতা হিসেবে প্রাথমিকভাবে বেশি পরিমাণে টিকা কিনলে দামের ওপর অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারত।

আরেকটু ব্যাখ্যা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। শুরুতে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারই টিকা কিনে গণ টিকাদান শুরু করেছিল। এখন রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোও নিদের উদ্যোগে টিকা সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছে। আর সেজন্য উৎপাদকদের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করতে হচ্ছে তাদের।

রাজ্য সরকারগুলোকে এখন কোভিশিল্ডের প্রতিটি ডোজের জন্য ৪ ডলার ও কোভ্যাক্সিনের প্রতি ডোজের জন্য ৮ ডলার করে দিতে হচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের কেনা দামের চেয়ে যথাক্রমে দ্বিগুণ ও চারগুণ বেশি। তবে কোম্পানি দুটির দাবি, ‘জনস্বার্থ বিবেচনায়’ তারা নাকি কমিয়েই ওই দাম রাখছে।

ভারতের বিরোধী দলগুলো একে ‘প্রতারণা’ বলছে। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে রাজ্যগুলোকে একটি ‘ইচ্ছাকৃত প্রতিযোগিতার’ মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

মালিনি আইসোলা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার শুরুতেই দেশের চাহিদা মেটানোর মত বড় অংকের টিকা কেনার অর্ডার দিলে এখন এভাবে দাম বেড়ে যেত না, বরং দুই ডলারের নিচে নেমে আসত।

এদিকে রাজ্য সরকারগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো টিকা মজুদের জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে, যার জন্য আখেরে ভোক্তাদেরই দাম দিতে হবে।  

এর ফলাফল হচ্ছে টিকার একটি মুক্ত বাজার, যেখানে দামের কোনো ঠিক ঠিকানা থাকছে না। আর এ বাজার গড়ে উঠছে যৌথভাবে জনগণের করের টাকা এবং বেসরকারি অর্থায়নে। ভারতের বেসরকারি হাসপাতালে এখন এক ডোজ টিকা কিনতে দেড় হাজার রুপি (২০ ডলার বা ১৪ পাউন্ড) গুনতে হচ্ছে।

বেশ কয়েকটি রাজ্য এখন ঘোষণা দিয়েছে, তারা ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা আমদানি করতে চায়। কিন্তু কোনো উৎপাদকই আগামী কয়েক মাসে টিকা সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না, কারণ ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে বিপুল টিকার বায়না দিয়ে রেখেছে।

রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি টিকা সম্প্রতি ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেলেও কবে ওই টিকা বাজারে মিলবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

ভারতে টিকার দাম এত বেশি হওয়ার কথা?

নতুন চুক্তিতে টিকার দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় অনেকেই সেরাম ইন্সটিটিউট এবং ভারত বায়োটেককে ‘মুনাফাখোর’ আখ্যায়িত করছে, যারা মহামারীর এই এমন সময়ে বেশি লাভ করা চেষ্টা করছে, আর সেটা তারা করছে সরকারি তহবিল পাওয়ার পর।

আবার অনেকে বলছেন, এই কোম্পানিগুলো বরং ঝুঁকি নিয়েছে; ভুল যা হয়েছে, সেটা ভারত সরকারের।

করোনাভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রে ভারতই একমাত্র দেশ, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার একমাত্র ক্রেতা নয়। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ দেশে টিকা সরকারিভাবে বিনামূল্যে দেওয়া হলেও কেবল কয়েকটি দেশে বেসরকারিভাবেও কেনা সুযোগ রয়েছে। ভারত সেইসব দেশের একটি।

অবশ্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন যে সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের উৎপাদন ব্যয় ও বাণিজ্যিক চুক্তিগুলোর বিষয়ে আরও স্বচ্ছ থাকা উচিত।

আইসোলা বলেন, কোভ্যাক্স কর্মসূচি ও গেটস ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে পাওয়া ৩০ কোটি ডলার সেরাম ইনস্টিটিউট কীভাবে ব্যয় করেছে, তা তাদের স্পষ্ট করা উচিত। এই তহবিলের যোগান দেওয়া হয়েছিল নিম্নআয়ের দেশগুলোর জন্য টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে।

সেরাম ইনস্টিটিউট যে কোভ্যাক্সকে সময়মত টিকা দিতে পারেনি, ভারত সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও এর একটি কারণ।

নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে প্রতিশ্রুত ৫০ শতাংশ টিকা সরবরাহে ব্যর্থতার কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আইনি নোটিসেরও মোকাবেলা করতে হচ্ছে এ কোম্পানিকে।

ভারত বায়োটেকের সঙ্গে ভারতের সরকারের চুক্তিও যাচাই করে দেখার আহ্বান জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ কোভ্যাক্সিনের মেধাস্বত্ব ব্যবহার করতে দিয়েছে ভারত বায়োটেককে। অথচ ওই টিকার ডোজের দাম কোভিশিল্ডের প্রায় দ্বিগুণ রাখা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনন্ত ভান প্রশ্ন রেখেছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ আর ভারত বায়োটেকের মধ্যে মেধাস্বত্ব ব্যবহারের চুক্তিতে কি এমন কোনো শর্ত আছে, যাতে সরকার জরুরি পরিস্থিতিতে যে কোনো নিয়ম ডিঙাতে পারে?

বিদেশে উদ্ভাবিত টিকার পেটেন্ট শিথিলের জন্য ভারত প্রস্তাব তুললেও, কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে তাদের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ভান বলছেন, ভারতে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। তবে ভারতের অতীতের টিকাদান কর্মসূচির দারুণ রেকর্ড বিবেচনায় রাখলে এটা অসম্ভব নয়। আর টিকার জন্য ভারত সরকার কেন মাত্র দুটি কোম্পানির ওপর নির্ভর করল, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

Share if you like

Filter By Topic