Loading...

কোভিড: শনাক্ত-মৃত্যুতে ভয়াবহতম জুলাই পার

| Updated: August 02, 2021 13:56:35


ফাইল ছবি ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসেই বাংলাদেশ সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

গত ১৬ মাসের মধ্যে এ মাসে যত মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, তা মোট আক্রান্তের এক-চতুর্থাংশের বেশি এবং মৃত্যুর সংখ্যা মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশের বেশি।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যায় জুলাইতে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং আক্রান্তদের মধ্য থেকে ৬ হাজার ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

যেখানে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জন এবং এই রোগে মারা গেছেন মোট ২০ হাজার ৬৮৫ জন।

অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং মোট মৃত্যুর ২৯ দশমিক ৮৭ শতাংশই ছিল গেল জুলাই মাসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম রোববার স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, “আমরা সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী পেয়েছিলাম ফেব্রুয়ারি মাসে, এক হাজার ৭৭ জন। আর জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী আক্রান্ত হতে দেখল পুরো জাতি।”

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের প্রভাবে এপ্রিলের পর থেকেই দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করে; মে-তে কিছুটা কমে জুনের শেষ সপ্তাহে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে।

শনাক্ত ও মৃত্যুতে এতদিন গত এপ্রিল ছিল সবচেয়ে ভয়াল। সে মাসে ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু ঘটে। শনাক্ত রোগী ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার।

জুলাই মাসে এসে সেই সব রেকর্ড ভেঙে যায়। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুরও নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে জুলাই মাসে। শেষে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও বেড়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত একদিনে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও শনাক্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল গত ২৮ জুলাই।

ওই দিন ৫৬ হাজার ১৫৭ নমুনা সংগ্রহ করা হয়; পরীক্ষা হয় ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ২৩০ জনের কোভিড শনাক্ত হয়।

এই তিন ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সংখ্যা ছিল যথাক্রমে গত বছর ৫ এপ্রিল (৩২০), ২১ মার্চ (৩৬) ও ৩০ মার্চ (১)।

করোনাভাইরাসে দিনে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ২৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৭ জুলাই; আর সর্বনিম্ন একজনের মৃত্যু হয় এ বছর ১৮ মার্চ।

গত ২৪ জুলাই শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ; সর্বনিম্ন হার গত বছর ৩০ মার্চ ছিল দশমিক শূন্য ৬৫ শতাংশ।

মৃত্যুর হার এযাবত সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল গত বছর ২৫ মার্চ; সর্বনিম্ন ১ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল গত বছরের ৪ জুলাই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, মহামারীর ২৯তম সপ্তাহের (১৮ থেকে ২৪ জুলাই) চেয়ে ৩০তম সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, সুস্থতা এবং মৃত্যু সবই বেড়েছে।

২৯তম সপ্তাহে ২ লাখ ২ হাজার ১১৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়, পরের সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৩ হাজার ২০০টিতে, বৃদ্ধি ঘটেছে ৫৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।

২৯তম সপ্তাহে ৬০ হাজার ৯৩৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ৩০তম সপ্তাহে তা ৫৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই সপ্তাহে মোট শনাক্ত হয়েছে ৯৬ হাজার ১৪০ জন।

২৯তম সপ্তাহে ৬৫ হাজার ১৭৬ জন সুস্থ হওয়ার বিপরীতে পরের সপ্তাহে ৮৯ হাজার ৮৭৩ জন সুস্থ হয়েছে, মোট সুস্থতার হার ৩৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

২৯তম সপ্তাহে ১৩৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল করোনাভাইরাসে। পরের সপ্তাহে তা আরও বাড়ে, ১৬৩৯ জন। বৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।

কোরবানির ঈদের জন্য নয় দিনের জন্য শিথির লকডাউনে চলাচল বেড়ে যাওয়ায় জুলাই পেরিয়ে এই অগাস্ট মাসে আরও ভয়াবহ অবস্থার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুলেটিনে অংশ নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যখাত পর্যায়ক্রমে তার সক্ষমতা বাড়ালেও সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।

“হাসপাতালের বেড সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানি, যদি মাস্ক না পরি, যদি সংক্রমণ কমাতে না পারি, তাহলে এসব দিয়ে সঙ্কুলান করা করা যাবে না। নিয়ম মেনে চললেই সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে। নইলে আমরা একটা অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাব।”

 

Share if you like

Filter By Topic