Loading...
The Financial Express

কোভিড নিয়ন্ত্রণ: কঠোরতম লকডাউন বাড়ছে কিনা সিদ্ধান্ত আজ

| Updated: August 03, 2021 11:47:32


ফাইল ছবি ফাইল ছবি

কঠোর থেকে কঠোরতম লকডাউনের পরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে; ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ডের এই সময়ে সবারই প্রশ্ন ৫ অগাস্টের পর লকডাউন থাকবে, নাকি থাকবে না?

ঈদের পরের লকডাউনে প্রথমে সবকিছু বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও শিল্পমালিকদের বারবার অনুরোধে সরকার ডেডলাইনের চারদিন আগে রোববার রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেয়। দু’দিনের জন্য চালু করা হয় গণপরিবহন।

এরপর থেকে রাজধানীসহ দেশজুড়ে রাস্তাঘাটে জনসমাগম বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে সামনের দিনে ‘বিধিনিষেধ’ কেমন হবে তা নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকরা এখনও নিশ্চিত নন।

৫ অগাস্টের পর চলমান লকডাউনের কী হবে সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে মঙ্গলবার। এদিন সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা বৈঠক হবে।

যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞরা চান উচ্চ সংক্রমণের হার এক সংখ্যার ঘরে না আসা পর্যন্ত লকডাউন ও বিধিনিষেধ চালিয়ে নিতে। তবে তা হতে হবে মহামারী নিয়ন্ত্রণের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

সোমবার অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগের দিন ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল।

কোরবানি ঈদের ছুটির পর কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গত ২৮ জুলাই দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজারের দুঃখজনক মাইলফলক পেরিয়ে গিয়েছিল। সোমবার তা ২১ হাজারে পৌঁছাল মাত্র পাঁচ দিনে।

সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৩ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৯৮৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪৬ জনের।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩১৭ জন। তাদের মধ্যে ২১ হাজার ১৬২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।

সংক্রমণের গত কয়েকদিনের এমন পরিস্থিতিতে রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “জীবনের জন্য জীবিকা দরকার, আবার জীবিকার জন্য জীবনও থাকতে হবে। এই দুটোর সমন্বয় আমাদের করতে হয়। সরকারের সব দিকেই ব্যালেন্স করে চলতে হয়।”

পরের লকডাউনের বিষয়ে বৈঠক মঙ্গলবার ১১টায়

আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভাটি ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভায় কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, ১৬ জন সচিব, বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইইডিসিআর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় থাকবেন।

জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউন বাড়বে কি, বাড়বে না- মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তি শুনব, তারপর পর্যালোচনা করব। এ মুহূর্তে বলা ঠিক নয়।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লকডাউন আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “আমি দেখিনি; কালকে দেখব আর কি। কালকের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত আসবে আশা করছি। যাই হোক- একটা সিদ্ধান্ত তো হবেই।”

দেশে গত বছর মার্চে সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর প্রায় দেড় বছরে বর্তমানেই ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে এপ্রিলের পর থেকে একের পর এক লকডাউন ও বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছেন সবাই।

সর্বশেষ গত ১ জুলাই কঠোর লকডাউন মানতে সবাইকে বাধ্য করতে আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারিও বাড়ানো হয়।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে।

গ্রেপ্তার, জরিমানা, মামলা কোনো বিধিনিষেধেই কাজ হচ্ছে না। নানা ছুঁতোয় বাসা-বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন সবাই। নগরীতে গাড়ির জটও দেখা গেছে গত কয়েকদিন ধরে।

‘এটা লকডাউন না, অতি দ্রুত বন্ধ করা উচিত’

চলমান লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই লকডাউন অতিদ্রুত বন্ধ করা উচিত। কারণ এটা লকডাউন না, এটা যে কী- জানি না।

 “এটাকে কী লকডাউন বলে? লকডাউন মানে কী রাস্তায় এত যানজট? এটা লকডাউন না, এটা কিচ্ছু না। এটা থাকল, কি থাকল না- এতে করোনার কিছু আসে-যায় না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ওপর এর কোনো প্রভাব নেই। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা- গার্মেন্টস নিয়ে কী হল। আবার কী খুলে দিবে- সেটা নিয়ে আরেক ঝামেলা হবে।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা কেন্দ্র করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

 “যার একটু লক্ষণ দেখা যাবে, সে এসে টেস্ট করবে। সে যদি আসতে না পারে, তাহলে তাকে উপজেলা থেকে গাড়ি গিয়ে তাকে নিয়ে এসে নমুনা নিয়ে আবার যেন বাসায় দিয়ে আসে।

 “নমুনা পরীক্ষার ফলাফল যেন পরদিনই দিয়ে দেয়। পজিটিভ হলে তাকে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই পরিবারটিকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে। স্থানীয় প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদেরকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর ১০০ শতাংশ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।”

লকডাউনে খেঁটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, চলাচলে কষ্ট হচ্ছে, একারণে এই লকডাউন তুলে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. নজরুল ইসলাম।

‘শুধু বিধিনিষেধে কাজ হবে না’

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “এ মুহূর্তে সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে পরিস্থিতি তাতে বিধিনিষেধ শিথিল করাটা ঠিক হবে না। বিধিনিষেধ ততক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া দরকার, যতক্ষণ শনাক্তের হার শতকরা ৫ এর নিচে না আসে, মৃত্যুটা ৫০ এর নিচে না আসে।”

বিধিনিষেধ যেন মানুষ মেনে চলতে পারে তেমন সহায়ক কার্যক্রম নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“মানুষ মানতে পারছে না বলে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়াটা হবে উল্টোপথে হাঁটা। বিধিনিষেধ কার্যকর করতে আমাদের কোথায় কোথায় সরকারি- সামাজিক সহায়তা লাগবে, কীভাবে আরও রিসোর্স মবিলাইজ করা যায়-সেগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার।”

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য সব কিছু বন্ধ করে দেওয়াটাও বাস্তবসম্মত না। তারপরও যেটা শুরু হয়েছে সেটা আরও কার্যকরী করে শণাক্তের হার ৫ এর নিচে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “এজন্য মানুষকে যা যা সাপোর্ট দেওয়া দরকার করতে হবে। না হলে মানুষেরও ক্ষতি হবে, অর্থনীতিরও ক্ষতি হবে। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাব।”

বিধিনিষেধ নতুন করে দুই সপ্তাহের বেশি বাড়ানোও ঠিক হবে না বলে মনে করেন মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, “আরও দুই সপ্তাহ দেখা দরকার। এরপরে সিদ্ধান্ত হবে। এরপর দেখব। আমাদের আরও কাজ করতে হবে।“

অন্তত দুটো কাজ করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “যার মধ্যে টিকা রয়েছেই।

“প্রতিদিন ১৫/১৬ হাজার শণাক্ত হচ্ছে, প্রত্যেককে ফলোআপ করতে হবে। তারা যেন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকেন টেলিফোনে হলেও, তারা যেন আলাদা থাকতে পারেন সে সহায়তা করতে হবে। টেস্ট করতে আগ্রহী করতে হবে।…চিকিৎসার আওতায় আনতে পারব তাদের। গুরুতর অবস্থায় যাবে না। রোগ ছড়াবে না এদের কাছ থেকে। এ দুটো জিনিস দরকার।”

Share if you like

Filter By Topic