আর্থিক প্রয়োজনে অনেকসময় আমাদের শিক্ষাজীবনে থাকাকালীন কাজ করতে হয়। চাহিদা মোতাবেক কর্মঘণ্টা ওঠানামা করে। যারা তুলনায় বেশি সময় কর্মক্ষেত্রে খরচ করে, তাদের তখন দরকার পড়ে শিক্ষা ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনা। আমাদের আজকের লেখাটি মূলত কাজে থেকেও কীভাবে শিক্ষাজীবনকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায়, তা নিয়ে।
প্রাসঙ্গিক কাজ খোঁজা
আপনি অনার্স কিংবা মাস্টার্সে যে বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, ঠিক তার সাথে মিল রেখে কোনো কাজ করা গেলে, ব্যাপারটি কেমন হয়? নিঃসন্দেহে ভালো। এতে আপনার পড়াশোনায় যেমন ব্যাঘাত ঘটে না, বরং কর্ম অভিজ্ঞতা শিক্ষাজীবনে কাজে লাগানোর পাশাপাশি নিজের সিভিটিকে আরও মজবুত করা যায়।
পরিকল্পনা:
পরিকল্পিত যেকোনো কিছুই কঠিনকে সহজ করে দেয়। হতে পারে প্রয়োজনে আপনাকে নিজের অনেকটা সময় কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয়। আবার একথাও মাথায় রেখে চলতে হয় যে আমি একজন শিক্ষার্থী। এক্ষেত্রে করণীয় বলতে খুব দারুণ একটি তালিকা প্রতি রাতে তৈরি করে রাখুন। আপনি ঠিক কতক্ষণ কর্মস্থলে থাকেন, বিরতি ঠিক কতখানি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষা খুব সন্নিকটে কি না, সিলেবাস সম্পূর্ণ করতে আপনি অনেকটাই পিছিয়ে কি না- ইত্যাদি।
মোদ্দাকথায়, হিসাব কষে চলতে পারলে এবং নিজের দায়বদ্ধতা, সীমাবদ্ধতার মধ্যে ব্যবধানটুকু ধরতে পারলে সহজেই যে কেউ কাজে থেকেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
উর্বর সময়
কাজের ফাঁকে হাতে যেটুকু সময় পাওয়া গেলো, ডিজিটাল এই যুগে তা হয়তো ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে ফুড়ুৎ! কেউ কেউ আবার ইন্টারনেট ভিত্তিক নানা গেমসে হয়ে পড়েন মশগুল। এতে করে পড়াশোনা থেকে অনেকেই দূরে সরে যায়। হ্যাঁ, বিনোদনের স্বার্থে এগুলোর প্রয়োজন আছে, অস্বীকারের সুযোগ নেই কোনো। কিন্তু গুরুত্বের প্রশ্নে কি এগুলোকে ততটা প্রশ্রয় দেয়া সমীচীন? অবশ্যই না। তাই নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে মস্তিষ্কের বিশ্রাম শেষে যতটুকু সময় হাতে পাওয়া যায় তার বেশিরভাগ সময় যেন উর্বর হয়।
সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা খুব দরকারি একটি বিষয়। যেহেতু আপনি একজন শিক্ষার্থী, সেহেতু যেকোনো সময় পড়াশোনার প্রয়োজনে কাজে কিছুটা বিরতি নেয়া কিংবা বিরতি না নিয়েও ঊর্ধ্বতনকে খুশি রাখার উপায় মাথায় রাখতে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারেন আপনার সহকর্মীরা। আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য কিংবা হয়তো আপনার গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষার দিনে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করা, ইত্যাদি বিষয়ে তারা অনেকটাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ।
সুফল সম্পর্কে জানা
অনেকসময় আমরা কর্মস্থলে ঢোকা মাত্রই মাথায় গেঁথে ফেলি, পড়াশোনা বুঝি শেষ। কাজের চাপে আর আমার ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে না। ভাবনাগুলো নিতান্তই অগভীর ও মানহীন। কারণ শিক্ষাজীবনে কর্মস্থলে যোগদান বরং আপনাকে অভিজ্ঞতার দুনিয়ায় আরও বেশি পোক্ত করে তোলে যা পড়াশোনা শেষে পরবর্তী যেকোনো কাজে যোগদানে বিশেষ অবদান রাখে। তাই শিক্ষাজীবনে কাজে থাকার সুফলগুলো মাথায় রাখা উচিত। এতে পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ে। ভেতর থেকে একধরনের ইতিবাচক শক্তি তৈরি হয়।
বিশ্রাম ও খাওয়া
যেকোনো ক্ষেত্রেই সবার আগে আমাদের মন এবং শরীরকে দরকার পড়ে। মন ভালো নেই, শরীর সুস্থ নেই- মানেই পিছিয়ে পড়া। কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা ঠিক রাখতে গেলে শুধু ইচ্ছে থাকাই যথেষ্ট নয়। বরং দেহমনে আলাদা শক্তি প্রয়োজন পড়ে। যা কিনা আমরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্যগ্রহণ থেকে পেয়ে থাকি।
পরিশেষে, মানিয়ে নেয়া ছাড়া জীবনের আর কোনো যোগ্যতা নেই। আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, শুধু শুধু হাঁসফাঁস করে গেলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং আফসোসের পাল্লাই ভারি হয় কেবল। তাই সঠিক দর্শন ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে যাওয়াই শেষ কথা হোক। হাতে থাকা সব কাজ স্বচ্ছ ও সুন্দর হোক। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে ভারসাম্যতা থাকুক, সফলতা হাসুক অন্তরে অন্তরে।
সঞ্জয় দত্ত ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।