Loading...

করোনার দিনগুলোতে ফ্যাশন

| Updated: August 03, 2021 10:34:14


করোনার দিনগুলোতে ফ্যাশন

নতুন দশকের ভোর হওয়ার সাথে সাথেই বিশ্ব জেনে গেল এক ভাইরাসের আগমনের কথা। ভাইরাসে আক্রান্ত হলো চীন দেশ। মাইক্রোস্কোপিক এই জড়-জীব মানুষের ফুসফুসে জায়গা করে নিয়ে ক্রমেই জায়গা করে নিয়েছে কাজ-কর্ম, মানসিক এবং দৈনন্দিন জীবনে। তাহলে এর প্রভাব কি আমাদের পোশাকর উপরেও পড়েছে? ফ্যাশনজগতে কি আদৌ কোনো পরিবর্তন হয়েছে? আজকের লেখায় আমরা এই উত্তরগুলো সম্পর্কে জানব।

পেশাদারি জীবনে

চাকুরিজীবী হিসেবে নয়টা-পাঁচটা কাজ করা ছিল কোভিড-১৯ পূর্বের নিত্যদিনের চিত্র। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়মিত এ সময়ে অফিসেই থাকা হতো। কর্মক্ষেত্রের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করতে হতো। এই এঁকে দেওয়া নির্দিষ্ট ছকে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কোভিড-১৯।

কোভিডকালে অফিস ফ্যাশনে তাই আমরা কিছু পরিবর্তন লক্ষ করে থাকি। একাধারে অনলাইন ব্যবসা ওয়াচ ট্যাগের ম্যানেজিং পার্টনার, পাঠাও লিমিটেড কোম্পানির এ্যাকুইজিসন এক্সিকিউটিভ ও  ফুলফিলমেন্ট বিভাগে কর্মরত মোঃ মাহমুদুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন,“পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা ঠিক বলতে পারবো না কেননা আমি চাকরিতে যোগদান করেছি এই কোভিডের সময়েই। আমি মনে করি না, করোনাকালে চাকুরীজীবিদের পোশাকে তেমন কোনো পরিবর্তন এসেছে। আমার অফিসের কর্মকর্তারা খুব একটা ফর্মাল পোশাক পরেন না। তাদের টি-শার্ট, পোলো শার্ট, এসব পরেই বরং অফিসে আসতে দেখা যায়।

সামগ্রিকভাবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হলে, যে প্রতিষ্ঠানে যেটা প্রয়োজন, তারা কিন্তু সেভাবে পোশাক পরেই অফিস করছেন। যেমন: ব্যাংকে এখনো কর্মকর্তারা টাই, শার্ট টাক-ইন করে অফিসে যান। তবে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করার জন্যে মাস্ক, গ্লাভস এবং মাথায় সার্জিক্যাল টুপি এগুলো পোশাকের সাথে নতুন সংযোজন হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

প্রয়োজনীয়তায় পরিবর্তন

কোভিড-১৯ আমাদের হিসাব-নিকাশে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। যেহেতু কিছুদিন পরপরই দেশ জুড়ে লকডাউন, সীমিত আকারে লকডাউন, কঠোর লকডাউন এবং শাটডাউন চলছে, তাই নিত্য প্রয়োজনের জিনিস ছাড়া মানুষ অনেক কিছুই তার খরচের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এসব বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস এবং কোভিড সুরক্ষার জন্য অন্যান্য পোশাকে।

অনেক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ব্যাংক কর্মকর্তা, চিকিৎসাকর্মী এবং সংবাদকর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সময়ে পিপিই দিয়েছে। তাছাড়া সরকারও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে পিপিই সরবরাহ করেছে।

ডিজিটালের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এক্সিকিউটিভ ওয়ালীউল ইসলাম সচেতন মানুষের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছেন, তারা সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করেন। তবে যারা তুলনামূলক কম সচেতন, তারা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করেন। কাপড়ে পরিবর্তন না আসলেও কর্পোরেট জগতে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা হয় বলে তিনি জানান।

নতুন ফ্যাশনের আবির্ভাব

করোনাকালে মাস্ক ও স্যানিটাইজারকে কেন্দ্র করে ফ্যাশনে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ প্রসঙ্গে ওয়ালীউল ইসলাম জানান যে, অপেক্ষাকৃত বয়স্ক চাকরিজীবীরা সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন। অপরদিকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কাপড়ের মাস্ক বেশি জনপ্রিয়, কেননা এটি দেখতে সুন্দর, মানানসই। ভারতের মতো বাংলাদেশে মাস্ক-ফ্যাশন এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি তবে তিনি লক্ষ করেছেন যে, নারীদের মাঝে জামার রঙের সাথে মানানসই মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল ও নকশা সমৃদ্ধ মাস্কের ব্যবহার তাদের মাঝে দেখা যায়। এক্সটেসির মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডও মেয়েদের জামার সাথে মানানসই মাস্ক বাজারে ছেড়েছে। তিনি মনে করেন, মাস্ক-ফ্যাশনের বিকাশ খুব শীঘ্রই ঘটতে যাচ্ছে।

করোনার শুরুতে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর বেচা-কেনায় কিছুটা কমতি দেখা গেলেও অনলাইন কাপড়ের ব্যবসায় সেটি ভিন্ন চিত্র। একই তথ্য দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং সিল্কওয়ার্ম ফ্যাশন হাউজের প্রতিষ্ঠাতা হাবীবা আক্তার সাথী।

তিনি বলেছেন, "২০২০ সালে যখন প্রথম লকডাউন হয়, তখন মানুষের মাঝে অনলাইনে কেনাকাটা করার প্রবণতা লক্ষ করা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছিল পোশাককেন্দ্রিক। যেহেতু আমি পশ্চিমা ধাঁচের জামা ডিজাইন করে থাকি, তাই নারীদের মাঝে এ নিয়ে ছিল বাড়তি আগ্রহ।

অনেকেই প্রথম দিকের লকডাউনে ছুটি উপভোগ করেছেন, হাউজ পার্টির আয়োজন করেছেন ফলে নিত্যদিনের ফ্যাশন চাহিদাতেও পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। ২০২০ এর তুলনায় বর্তমানে যেহেতু, অনেকেই কর্মস্থলে ফিরেছেন; তাছাড়া ফেসবুকের বুস্ট ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন এসেছে, তাই চাহিদাতে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে।”

স্বনির্ধারণ বা কাস্টমাইজেশনের সম্ভাবনা

মাস্ক একটি বাড়তি সংযোজন হওয়ায় এখানেও আমরা কিছু পরিবর্তন দেখেছি। বিভিন্ন ধরনের মাস্ক ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। মাস্কগুলো চাইলে মানুষজন পছন্দমতো নির্ধারণ বা কাস্টমাইজেশন করে নিতে পারে। তাই, ফুল ও বিভিন্ন প্রকারের নকশা ছাড়াও ফুটবল ক্লাবের লোগো থেকে শুরু করে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের ‘দ্য স্টারি নাইট’; সবকিছুর প্রিন্টই এখন মাস্কের মাঝে পাওয়া যায়।

চীন থেকে ইউরোপ, ভারত এবং এই বৃহত্তম ব-দ্বীপ কোনোটিই রক্ষা পায় নি করোনা মহামারীর হাত থেকে। হাসপাতাল থেকে দোকান যেখানেই যান "নো মাস্ক, নো সার্ভিস" লেখাটা আপনার চোখে পড়বে। তাই অস্বস্তিকর হলেও মাস্ক, গ্লাভস আর স্যানিটাইজার হয়েছে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইন বলেন, পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াই টিকে থাকার সূত্র। বিগত প্রায় আঠারোমাস ধরে করোনা ভাইরাস আমাদের সাথেই অবস্থান করছে। তাই প্রয়োজনকে না এড়িয়ে বরং প্রয়োজনকে ঘিরেই নতুন করে সাজানো হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার কেন্দ্রিক গোটা ফ্যাশন। হয়েছে ফ্যাশনের বিনির্মাণ।

মোঃ ইমরান খান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic