Loading...

কথোপকথনের শুরু যেভাবে করবেন

| Updated: June 13, 2021 15:38:32


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আড্ডায় ব্যস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আড্ডায় ব্যস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

ধরা যাক, আপনি একটি কর্পোরেট অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। অনুষ্ঠানে দেশের অনেক বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা এসেছেন। তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কথা কীভাবে শুরু করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। অথবা মনে করা যাক, আপনি এমন এক জায়গায় গিয়েছেন, যেখানে আপনার পরিচিত মানুষ বলতে কেউ নেই। সেক্ষেত্রে কী করবেন? কীভাবে কথোপকথন শুরু করবেন? কীভাবে পরিচিত হবেন নতুন মানুষের সাথে? নতুন সম্পর্কই বা কীভাবে গড়ে তুলবেন? এই প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তর খুঁজতেই আজকের এই লেখা। দেখে নেয়া যাক, এমন সব পরিস্থিতিতে কথোপকথন শুরু করার কিছু সহজ উপায়।

সাধারণ বিষয় বেছে নেয়া

কারো সাথে কথা বলার সময় তার সাথে আপনার আগ্রহের বা জানার মিল রয়েছে, এমন কোনো সাধারণ বিষয় বেছে নিলে কথা শুরু করতে সুবিধা হয়। এতে করে অপর ব্যক্তি অন্তর্মুখী হলেও যেহেতু বিষয়টি তার জানার অধীনে বা তার পছন্দের, তাই তিনি কথা বলতে আগ্রহী হবেন।

যেমন আপনি কোন বইয়ের দোকানে গিয়েছেন। তখন আপনার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তির সাথে কথা বলতে চাইলে কোনো বই বা বইয়ের ধরন নিয়ে কথোপকথন শুরু করতে পারেন।

প্রশংসাসূচক বাক্য দিয়ে শুরু করা

অনেকসময় ব্যক্তি অপরিচিত হলে সাধারণ বিষয় ঠিক করা কঠিন হয়ে যায়, যেহেতু পছন্দ-অপছন্দ জানা সহজ হয় না। তখন সাধারণ বিষয় বাছাই না করে উক্ত ব্যক্তির প্রশংসা করে আপনি আলাপের সূচনা করতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি ব্যক্তির পোশাক, তার হাতের ঘড়ি বা পকেটের কলম সম্পর্কে প্রশংসা করতে পারেন। সাধারণত মানুষ নিজের সম্পর্কে ভালো বাক্য শুনতে পছন্দ করে। তাই কথোপকথন শুরু করার জন্যে সাধারণ বিষয় বাছাই করার চেয়ে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা কার্যকর।

যেমন: “আপনাকে এই শার্টে অনেক মানিয়েছে। আপনার ঘড়িটি অনেক সুন্দর।”

তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকসময় এমন হতে পারে যে, আপনি কারো ব্যক্তিগত ব্যবহারের এমন বস্তু সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন, যা তার কাম্য নয়। তখন হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই প্রশংসা করার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভালো। একটি উদাহরণ হলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।

হয়তো আপনি কেনাকাটার জন্য কোনো সুপার শপে আছেন। সেখানে কারো সাথে কথা বলা অনেক জরুরি। তাই আপনি কথা শুরু করার জন্য 'ব্যক্তির প্রশংসা' নামক পদ্ধতিটি বেছে নিলেন এবং তা করতে গিয়ে আপনি তার ব্যাগ বা মানিব্যাগের ভেতর রাখা কোনো বস্তু সম্পর্কে প্রশংসা করলেন। সেটা হতে পারে কোনো বই। কিন্তু যেহেতু এটি তার ব্যাগের ভেতরে রাখা, তাই এ বিষয়ে প্রশংসা করা হবে অনুচিত। এক্ষেত্রে ব্যক্তিটি মনে করতে পারে, আপনি তার অতি ব্যক্তিগত স্থানে প্রবেশ করেছেন। তাই প্রশংসা করতে গিয়ে এসব বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

মতামত চেয়ে নেয়া

সাধারণত মানুষ তার মতামত জানাতে পছন্দ করে। মতামত দেয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করতে সমর্থন হয়। তাই অন্যেরা তার কাছ থেকে মতামত আশা করবে, তার মতকে সম্মান দেবে, গ্রহণ করবে- এ বিষয়গুলো ব্যক্তি পছন্দ করে। এজন্য কোনো বিষয়ে কারো মতামত কী, তা জানতে চেয়ে কথোপকথনের সূচনা করা যায়।

যেমন: ঘরের অভ্যন্তরে রং ও নকশা করতে হবে। আপনি এই দলগত কাজে রয়েছেন। উক্ত কাজের সাথে আপনার একজন অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। কাজটি করতে হলে আপনার তার সাথে সম্পর্কটা সহজ হতে হবে। এমতাবস্থায় আপনি তার মতামত চেয়ে কথোপকথনের সূচনা এভাবে করতে পারেন যে, "আমি মনে করি, এই দেয়ালটায় রঙের ব্যবহার একটু কমাতে হবে। আপনি কী মনে করেন?"

এতে করে আপনার তিনটি উপকার হবে। প্রথমত, ব্যক্তি বুঝতে পারবেন যে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, আপনার প্রতি তার ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তৃতীয়ত, এই ইতিবাচক ধারণার জন্য কাজটি করতে সহজ হবে।

এভাবে আপনি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে কথোপকথন শুরু করতে পারেন। এতে করে যোগাযোগ ভালো হবে এবং দলগত কাজে ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।

সহযোগিতা করা

কাউকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে কথোপকথন শুরু করা বেশ কার্যকরী। শুধু ইতিবাচক কথা-বার্তা বা কার্যকর যোগাযোগ সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য নয় বরং ভবিষ্যতে অটুট সম্পর্ক তৈরি করতেও এই পদ্ধতিটি প্রভাব রাখে।

হয়তো আপনি বাসে বসা, আর আপনার পাশে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি তখন তাকে বসতে দিয়ে কথোপকথনের শুরু করতে পারেন। আবার ধরা যাক, আপনি একটি অনুষ্ঠানে আছেন। সেখানে আপনার কারো সাথে কথা বলতে হবে। তখন আপনি তাকে পানীয়ের গ্লাসটি এগিয়ে দিলেন বা বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিলেন। এভাবে আপনি আলাপের সূচনা করতে পারেন।

এতে করে ব্যক্তির মনে আপনার প্রতি সম্মানসূচক মনোভাব সৃষ্টি হবে। আপনার কথা শুনতে তিনি আগ্রহী হবেন, প্রয়োজনে আপনাকে সহযোগিতা করবেন। এভাবে সম্পর্কের জাল বিস্তৃত এবং দৃঢ়তর হয়।

কাউকে সহযোগিতা করা স্বাভাবিকভাবেই চরিত্রের ভালো দিকগুলোর একটি। তাই শুধু সম্পর্ক তৈরি করা ব্যতীত সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের সব সময় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখা উচিত।

সাহায্য বা তথ্য চাওয়া

সাহায্য করা ছাড়াও কারো কাছ থেকে সাহায্য চেয়েও আলাপের সূচনা করা যায়। কোনো প্রয়োজনীয় ও সাধারণ তথ্য জানতে চাওয়া এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তা হতে পারে কোনো জায়গার ঠিকানা জানতে বা নিয়ম-নীতি। এভাবে ব্যক্তি সাধ্যমতো আপনার উপকার করবেন। ফলে, আপনিও এর সাথে প্রাসঙ্গিক আরো কিছু কথা জুড়ে দিয়ে কথোপকথন সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

এখানে একটি বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আপনার প্রশ্ন হতে হবে প্রাসঙ্গিক এবং ব্যক্তির সাধ্যের ভেতর। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বা অতিরিক্ত সাহায্য আশা করলে আপনি তার বিরক্তির কারণ হতে পারেন। হয়তোবা তিনি পরবর্তী সময়ে আপনার সাথে আর কথা বলতেই আগ্রহ প্রকাশ করবেন না। তাই সাহায্য চেয়ে কারো ঘনিষ্ঠ হওয়া যেমন সহজ, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত সাহায্য নিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করা তার চেয়েও বেশি সহজ!

কথোপকথনের সূচনা, প্রতিটি আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই জীবনের যেকোনো পর্যায়ে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক তৈরি করা এবং পরিচিতদের পরিধি বিস্তার করার ক্ষেত্রে এটি খুব প্রয়োজনীয়। এছাড়াও যেকোনো কাজের সফলতা আপনার কথোপকথনের উপরই নির্ভরশীল। তাই উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো বিবেচনায় রাখলে পরবর্তী সময়ে কথোপকথন শুরু করা আপনার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

মোঃ ইমরান খান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। ই-মেইল: [email protected]

 

Share if you like

Filter By Topic