Loading...

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি: সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নির্মাণের মূল রসধারা

| Updated: January 24, 2022 17:23:49


মুঘল সম্রাট শাহ আলম ১৭৮১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তার কাছ থেকে তাদের সৈন্য সামন্ত সম্পর্কে অবহিত হচ্ছেন – দ্য গার্ডিয়ান ছবি মুঘল সম্রাট শাহ আলম ১৭৮১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তার কাছ থেকে তাদের সৈন্য সামন্ত সম্পর্কে অবহিত হচ্ছেন – দ্য গার্ডিয়ান ছবি

সেদিন বঙ্গপ্রান্তে পণ্যবিপণীর এক ধারে   নিঃশব্দচরণ/আনিল বণিকলক্ষ্মী সুরঙ্গপথের অন্ধকারে  রাজসিংহাসন।/বঙ্গ তারে আপনার গঙ্গোদকে অভিষিক্ত করি/নিল চুপে চুপে —/ বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী/রাজদণ্ডরূপে।

কেবল বাংলা বা ভারত নয় বরং বিশ্বের দেশে দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ’বণিকের মানদণ্ড’ রাত পোহালে দেখা দিয়েছিল  ’রাজদণ্ডরূপে।’ এর মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রাজদণ্ডকে চিরতরে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে করতলগত করার বণিককূলের ধারাবাহিকতারও। আজকের যুক্তরাজ্যের সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার পেছনেও রয়েছে এই ‘বণিকের মানদণ্ড।’ সময়ের সাথে সাথে ‘মানদণ্ডের’ বাহ্যিক রূপের বদল ঘটেছে কিন্তু ধারাবাহিকতার ঘটেনি পরিসমাপ্তি। ‘বণিকলক্ষ্মীরাই’  সুরঙ্গপথের অন্ধকার রাজসিংহাসন’ নিয়ে আসার ভূমিকায় আজো রয়েছে।

কোম্পানি রাজ অথবা কোম্পানির শাসন বলতে উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকেই বোঝান হয়। তবে নামের বদল হলেও অদ্যাপি সেই ‘ট্রাডিশন সমানে চলছে।’

এডমন্ড স্মিথের ‘মার্চেণ্টস’ বই নিয়ে লিখতে গেলে এ  সব কথা মোটেও প্রসঙ্গহীন হবে না। তবে উইলিয়াম ডালরিম্পলের আলোচনার আয়োজন হয়েছে ভিন্ন ভাবে। তিনি ফাইনান্সিয়াল টাইমসে লিখেছেন: ১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল। এশিয়ার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সর্বোচ্চ কর্তা প্রেসিডেন্ট মেথওল্ড স্বদেশে ফিরে অতি গুরুত্বের একটি চিঠি লেখার জন্য পালকের কলম হাতে তুলে নেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালকদের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি জানান, কোম্পানির পক্ষ থেকে যে সব নব নিযুক্ত ব্যক্তিকে ভারতে পাঠানো হয়েছে তাদের তৎপরতা কেবলই হতাশার সৃষ্টি করেছে। ব্যতিক্রমহীনভাবেই এ দলের প্রায় সবাই “মাতাল, লম্পট, উচ্ছৃঙ্খল; সঙ্গী হিসেবে তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা দায়, সুরাটে (তাদের  একবার বের হওয়ার অনুমতি দিলে), দশদিনের মধ্যে মধ্যে আর টিকিটিরও দেখা পাওয়া যাবে না। তবে ট্যাঁকের জোরে কুলালে আরো বেশি দিন বাইরে থাকবে। চাকরি থাকলে মহুয়ার মদ এবং  তাড়িতে  (যদি এর চেয়েও বদ কিছু না করে তবে) গলা পর্যন্ত ডুবে থাকবে।”

পালকের কলম আর দোয়াতে চুবানো কালির লেখা চিঠি এখানেই থেমে যায়নি। তিনি আরো লেখেন, “ (গোয়াতে) (ভারতে ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে প্রথম গোয়া-দমন-দিউতে ঘাঁটি গেড়েছিল পর্তুগীজরা।) পর্তুগালের বেশ কয়েকটি বন্দরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এ সব কর্মী যে আচরণ করেছে, কীর্তিকলাপ করেছে, তা শুনতে শুনতে আমাদের কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। ইংরেজ জাতির কাছে তাদের সে কলঙ্কের কাহিনি তুলে ধরতে চাইনা। তাদেরকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদের মধ্যে হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র কর্মী হিসেবে ভালো। আর বাকিদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় তাড়ির বোতল বা মহুয়া মদের ভাঁড়ের কাছেপিঠে।”

লন্ডনে পারিবারিক আশাবাদী পৃষ্ঠপোষকতার পালে হাওয়া লাগিয়ে এ কাহিনির শুরু। আর দূর দেশে অসম্মানজনক দুঃসাহসিক কাজের মাধ্যমে যার পরিসমাপ্তি – এমন অনেক গল্পই ‘মার্চেন্টস’এ শোনান এডমন্ড স্মিথ। এলিজাবেথের সময়কার উত্তাল জীবন যাত্রার অনেক কাহিনি তুলে আনেন বিস্ময়কর ভাবে বিস্তৃত এবং গভীর-গবেষণার এ বইতে। এ সব অনেক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে দুঃখজনক ভাবে। চূড়ান্ত বিচারে এরাই ছিল “ইংল্যান্ডের উদীয়মান বিশ্ব বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্যের পেছনে চালিকা শক্তি।” এরাই এলিজাবেথের ইংল্যান্ডের রূপান্তর ঘটিয়ে “বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত” করার বহু কাজই করেন।

ইংল্যান্ডের বাণিজ্য কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্ত যুবকদের বেশিরভাগই ব্যবসার পটভূমি থেকে এসেছে। অভিন্ন শিক্ষা এবং শিক্ষানবিশের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য কোম্পানির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ তাদের। তরুণ বয়স থেকেই চিঠি-লেখা শিল্প এবং হিসাবরক্ষণ কাজের প্রশিক্ষণ পান তারা। সাধারণত পারিবারিক কর্মতৎরতার প্রভাবই তাদেরকে বাণিজ্য সংস্থাগুলোকে ঢোকায় প্রথম সহায়তা করেছ। দ্রুতই তারা, কিশোর বয়স পার হওয়ার আগেই, কর্মগুণে নিজেদেরকে ছড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বে। “ভার্জিনিয়া থেকে আহমেদাবাদ এবং (রুশ নগরী) আরখানগেলস্ক থেকে ( পশ্চিম আফ্রিকার দেশ) বেনিন পর্যন্ত” পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে তারা।

ষোড়শ শতাব্দীর লন্ডন বিস্ময়করভাবে  বহুজাতিক এবং বহুভাষিক নগরী হয়ে উঠেছিল। স্মিথ জানান, সে সময়ে লন্ডন সফরে যান “ ‘সিদি’ আবদুল্লাহ দোদান’, তিনি ‘আন্দালুসিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন, স্বাভাবিকভাবে স্প্যানিশ এবং ইতালীয় ভাষায় কথা বলতেন।’ লন্ডনে তাঁর সাথে কথা বলতে পারে এমন ব্যবসায়ীদের খুঁজে পেতে কোন অসুবিধাই হয়নি।” এ ছাড়া, ওসমানীয় সুলতান মেহমেদ তৃতীয় এবং প্রথম এলিজাবেথের মধ্যে লেভান্ট বাণিজ্য সংক্রান্ত চিঠিপত্র ইংরেজি, ল্যাটিন এবং আরবি ভাষায় বিনিময় হতো।

এই বাণিজ্য-লক্ষ্মীর জেরে অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অর্থেই হয়ে ওঠেন অগাধ সম্পদশালী। কালো পোশাক পরিহিত এবং সাদা-গলবস্ত্র সজ্জিত টিউডর বণিক টমাস গ্রেশাম-এর অনবদ্য প্রতিকৃতিটি এঁকেছেন অ্যান্থনিস মোর। উজ্জ্বল এ প্রতিকৃতির দিকে তাকালে দেখতে পাই, টমাস গ্রেশামের অন্তর্ভেদী, হিসেবি দৃষ্টিতে সরাসরি তাকিয়ে আছেন। তাঁর এই প্রতিকৃতি সাফল্যের অন্যতম গাথা হয়ে উঠেছে। ব্যবসা জগতে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে “মখমল, সাটিন, দামাস্ক (নামে পরিচিত সূক্ষ্ম কারুকার্য আলোর প্রতিফলনে দৃষ্টিগোচর হয় এরকম রেশম বা শণের বস্ত্র), (সাধারণত লাইনিং হিসেবে ব্যবহৃত নরম রেশমি বস্ত্র) সারসেনেট, (উটের পশম বা ছাগলোমে প্রস্তুত বস্ত্র বা এ বস্ত্রে তৈরি পোশাক) ক্যামলেট, (রঙিন সুতা দ্বারা অলংকৃত বস্ত্রখণ্ড; তাপিশ্রী,) ট্যাপেস্ট্রি, কাঁচা রেশম, (রেশমের মতো বস্ত্র, তাফতা) তাফেটা, ডাচ বস্ত্র, ইংলিশ বস্ত্র,  এবং (মোটা পশমী কাপড়) ‘কার্সি’ ” পাশাপাশি সীসা, টিন এবং রূপার ব্যবসাও টেনেছে তাকে। তিনি তাঁর সময়ে সবচেয়ে বিত্তবান বণিক বনে যান। প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটেনের রয়্যাল এক্সচেঞ্জ। (সব স্টক একচেঞ্জের জননী হিসেবে কথিত বেলজিয়ামের স্টক একচেঞ্জ) অ্যান্টওয়ার্প বোর্সে’র আদলে এটি তৈরি করা হয়। রাজা ষষ্ট এডওয়ার্ড, রানি মেরি এবং এলিজাবেথের আর্থিক উপদেষ্টা হন তিনি। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ এবং বক্তৃতামালার মধ্য দিয়ে আজো আমাদের স্মৃতিতে সজীব হয়ে আছেন এই বণিক।

তবে সে যুগের বণিকদের মধ্যে অনেকেই এমন চোখ ধাঁধানো সফলতা লাভ করতে পারেননি। “লক্ষ্মীরে হারাবই যদি, অলক্ষ্মীরে পাবই” যেন তাদের জীবনে সত্য হয়ে উঠেছে। সত্য হয়ে উঠেছে “যদি কোথাও কূল নাহি পাই তল পাব তো তবু।” বিশেষ করে ইংরেজ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাথমিক যুগের অনেকের ভাগ্যে এমনই হয়েছে। সে যুগের সদ্য শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অনেকাংশই ছিল অচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া এবং পরিস্থিতি বুঝে পথ তৈরি করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

উদাহরণ হিসেবে, গ্রেশামের সমসাময়িক কয়েকজনের কথা বলা যায়। বাণিজ্য তৎপরতা চালাতে  যেয়ে তাঁরা “বেনিন নদীর তীরে আফ্রিকায় পরিত্যক্ত” হন। মরিচের একটি বিশাল চালানের জন্য বেনিনের রাজার সাথে দরকষাকষিতে সফল হন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের কপাল ভাঙ্গে নাবিকদের বিদ্রোহের কারণে। “বৈচিত্র্যময় এবং বহু দোষেগুণে” গুণান্বিত ক্যাপ্টেন মিস্টার উইন্ডামের আচরণের প্রতিবাদে বিদ্রোহ করেন নাবিকরা। এর পরিণামে বিপর্যস্ত হন এ সব বণিক।

“অশালীন নারী রাখা” এবং “হেরিং এর সেরা ব্র্যান্ড” নকল করার মতো তৎপরতা থেকে শুরু করে একজন প্রবীণ বণিককে “মিথ্যাবাদী প্রতারক”  বলা এবং “নোংরা এবং অশোভন বক্তৃতা” দেওয়ার মতো অপকর্মের জেরে অনেকেরই বাণিজ্য পেশাজীবনের অকাল মৃত্যু ঘটে। পচা হাতের লেখার কারণেও বাণিজ্য পেশার বারোটা বেজে গেছে এমন অন্তত একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে বইতে।  আফ্রিকা থেকে “২ বা ৩টি হনুমান” আনার আদেশে দেওয়া হয়। হাতের লেখা অপাঠ্য হওয়ায় শেষ পর্যন্ত লন্ডন বন্দরে এসে ভিড়ে ২০৩টি হনুমানবাহী জাহাজ!  আর সে সাথে যবনিকপতন ঘটে সংশ্লিষ্ট বণিকের বাণিজ্য জীবনের!

এতোসব ভুল-ভ্রান্তি সত্ত্বেও সে যুগের  ইংরেজ বাণিজ্যের গতিপথ জুড়ে ছিল বিস্ময়কর বৈচিত্র্য।  বাণিজ্যের গতি এতোটাই দ্রুত এবং খাড়াভাবে ঊর্ধ্ব যাচ্ছিল তা যে কারো মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।  ১৫৫০ থেকে থেকে ১৬৫০ সালের মধ্যে দ্বীপদেশটির অর্থনৈতিক উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল চারগুণ। ব্রিটেনের উন্নয়নে ইংরেজ বণিকগোষ্ঠীর প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে  স্মিথ লিখেন,  “ইংল্যান্ডের উন্নয়নে যে অবদান রাখে তারই ফলে ইউরোপের প্রান্তবর্তী প্রান্তিক দেশ থেকে বিশ্ব বাণিজ্য তৎপরতার কেন্দ্রে হয়ে ওঠে দেশটি।”। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নাবিকদের জলদস্যুবৃত্তি নিয়ে যে জনশ্রুতি রয়েছে” তার জোরে এমন রূপান্তরের ঘটেনি।   বা বহুল কথিত “জলদস্যু এবং দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের” কর্মফলে এমনটি ঘটেনি।  বরং “নিছক বণিককুলই” ঘটিয়েছে এ রূপান্তর।”

এলিজাবেথ যুগের এ সব ব্যবসায়ী “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি তৈরি করেন এবং দ্বীপদেশকে বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রে স্থাপন করেন, অনাগত শতাব্দীসমূহের জন্য দ্বীপদেশটির ভাগ্যরেখা নির্ধারণও করেন।”

স্মিথের মতে,  এ সব বণিক নিজের লাভের মতলবে কাজ করেছেন। প্রায়ই সময়ই তাদের বরাতে জুটেছে প্রাথমিক যুগের যৌথ স্টক কর্পোরেশনের অবারিত আশীর্বাদ। সরকারি কর্তাদের আশীর্বাদ তারা  পায়নি। বণিকরাই ইংল্যান্ডের “ঔপনিবেশিক উদ্যোগের নেতার ভূমিকায় ছিলেন” বা  বিনিয়োগকারী, সমর্থনকারী এবং সরবরাহকারী ছিলেন। এইসব তৎপরতার মধ্য দিয়ে “বাণিজ্যিক এবং ঔপনিবেশিক উদ্যোগের পারস্পরিক মিশ্রণ ঘটে...একটি বাণিজ্য ধারা গড়ে তুলে, তাতে একাধিক সাম্রাজ্য, মহাসাগর এবং মহাদেশে ব্যাপ্ত হয়ে  ইংল্যান্ড দ্রুত পরিপক্কতা লাভ করে দুনিয়ার বাণিজ্য ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।”

উপসংহারে স্মিথ মত ব্যক্ত করেন যে “ এটি একটি স্বতন্ত্র বাণিজ্যিক বা  কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ছিল এবং ব্যক্তিরা ভূমিকা পালন করেন, রাষ্ট্রের পরিবর্তে তারা এ ভূমিকা পালন করেন” যা বর্তমান ইংল্যান্ডের “ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক ও সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টা”র নিয়ামক হয়ে উঠেছে।

এরই নেতৃত্বে, ভালো খারাপ যাই হোক না কেনো, আয়ারল্যান্ডের আলস্টার খামারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, উত্তর আমেরিকার উপকূল এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে বসতি স্থাপন করা হয়। এশিয়ার আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান ভূসম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া হয়।  বিশেষ করে মুঘল ভারতকে হাতিয়ে নেওয়া হয়। এটি ছিল সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এরই বদৌলতে ইংল্যান্ড সেই সময়ে এত বিশাল ধন-সম্পদ কব্জা করে, এবং প্রকৃতপক্ষে অনেক কিছু যা উত্তর-ঔপনিবেশিক কলঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। ইংল্যান্ডকে এ পথে পরিচালিত করে বাণিজ্য এবং ঔপনিবেশিক ভাবধারার একযোগে পায়ে পা মিলিয়ে পাদচারণা। 

ইংল্যান্ডের বিশাল ক্রমবর্ধমান সম্পদ কিভাবে গড়ে উঠেছিল; কি ভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশের আওতাধীন সাত সাগর আর তের নদীর ওপারে অবস্থিত  অন্যান্য অর্থনীতির ঘাড়ে বন্দুক রেখে বিত্ত-বেসাতি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে স্মিথ একটু বেশি কথা বলতে পারতেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বা কর্পোরেট পুঁজিবাদ এবং ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের জন্ম হয় একই সময়ে। আর এই ছিল সত্যিকার অর্থে ড্রাগনের দাঁত ছিল যা ঔপনিবেশিক দুনিয়ার সৃষ্টি করেছে।

বাংলা একাডেমী(তখনো একাডেমি হয়নি) থেকে ১৯৬৪ সালে তোফায়েল আহমদের আমাদের প্রাচীন শিল্পে এ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়। মধ্যযুগের বাংলায় বিনিময় বাণিজ্য বাণিজ্য বা বার্টার ট্রেড নিয়ে আলোচনার সময়ে তুলে ধরা হয় মঙ্গল কাব্যের পঙক্তিমালা।

“কুরঙ্গ(হরিণ) বদলে তুরঙ্গ(ঘোড়া) পাব/নারিকেল বদলে শঙ্খ/বিড়ঙ্গ(আয়ুর্বেদীয় ঔষধে প্রয়োজনীয় ফল বিশেষ)বদলে লবঙ্গে পাব/শুণ্ঠের(শুকনা আদা) বদলে টঙ্ক(টাকা)।”

একই বইয়ের ১২ পাতায় লেখা হয়েছে, “ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী বাণিজ্যিক লেনদেনে পলাশীতে আমাদের পরাজয়ের পূর্ব পর্যন্ত সোনা-রূপা দিয়েই আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের দায় দেনা শোধ করতো, বছরে তা ছিলো গড়ে ৭,০০০,০০০ পাউণ্ড। এ জন্য বিলাতে প্রতিবাদ উঠেছিলো এ বলে যে দেশের সম্পদ ক্ষয় হচ্ছে।

১৭৬৫ সালে কোম্পানীর দেওয়ানী লাভের পর কালের চাকা ঘুরে গেলো। এখন প্রস্তাব এলো উদ্বৃত্ত রাজস্ব বস্ত্রের আকারে নয় বুলিয়ান বা সোনারূপার আকারে বিলাতে পাঠান হউক। অবশ্য ১৭৬৯ সালে লর্ড নর্থ হাউস অফ কমন্সে তাঁর প্রতিবাদ করেন সোনার হাঁসের উপমা দিয়ে। সুতরাং কামধেনুটিকে ধীরে সুস্থেই দোহন করা সাব্যস্ত করা হলো।” 

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic