Loading...
The Financial Express

‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’র মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা গ্রেপ্তার

| Updated: May 18, 2021 13:33:58


‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’র মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা গ্রেপ্তার

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কক্ষ থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি চুরির চেষ্টা এবং মোবাইলে ছবি তোলার’ অভিযোগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে, যেখানে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় চুরি এবং ১৯২৩ সালের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রোজিনা ইসলাম ওই অফিস থেকে কোনো নথি সরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় তার এই সহকর্মী ‘আক্রোশের শিকার’ হয়েছেন বলে তাদের সন্দেহ। 

সোমবার দুপুরের পর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার কক্ষে রোজিনাকে আটক করার পর প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা সেখানে তাকে আটকে রাখা হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার বিরুদ্ধে।

ওই সময় একদল সাংবাদিক শাহবাগ থানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন তারা।

মধ্যরাতের আগে আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের সামনে এসে জানান, দণ্ডবিধি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে রাতে থানায় রেখে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হবে।

সচিবালয়ে নাটকীয়তা

সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা সোমবার বিকালে রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ছুটে যান। যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল, ছয়জন নারী পুলিশ সদস্যকে সেখানে দেখা যায়। কক্ষের বাইরে আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

আসলে কী ঘটেছে জানতে উপস্থিত সাংবাদিকরা কয়েক দফা সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি।

বেলা সাড়ে ৪টার দিকে রোজিনা বলেন, “সচিবের সাথে দেখা করতে আমি তার একান্ত সচিব সাইফুলের কক্ষে আসি। এরপর হঠাৎ করে পুলিশ ডেকে এনে আমাকে এই কক্ষে আটক করা হয়।”

আটকের পর দেহ তল্লাশি করা হয়েছে জানিয়ে এই সাংবাদিক বলেন, “মিজান নামে এক পুলিশ সদস্য আমাকে নাজেহাল করেছে। এ দপ্তর থেকে কোনো ধরনের নথি আমি নিইনি।”

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দাবি তোলেন। তবে কর্মকর্তারা তাতে সাড়া দেননি।

রাত সোয়া ৮টার দিকে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (৩ নম্বর ভবন) নিচে এনে রাখা হয়। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ তলা থেকে রোজিনা ইসলামকে লিফটে করে নিচে নামিয়ে একটি সাদা রঙের গাড়িতে তুলে থানার দিকে রওনা হয় পুলিশ।

রোজিনাকে কী অভিযোগে আটক করা হল- সাংবাদিকরা তা জানতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা তখন কোনো উত্তর দেননি।

উপস্থিত সাংবাদিকরা এরপর আবারও সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সাথে দেখা করে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চান। তখনও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

পরে রাত ৯টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে তিনি (রোজিনা) মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

“একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য দেখে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা তিনি নিয়ে যেতে পারেন না। তখন পুলিশকে জানানোর পর মহিলা পুলিশ আসে। এখন তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

বিক্ষোভ, সন্দেহ

রোজিনাকে শাহবাগ থানায় নেওয়ার পর তাকে ওসির কক্ষে রাখা হয়। অন্য সাংবাদিকদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

রোজিনার পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীরাও ততক্ষণে থানায় উপস্থিত হন। সাংবাদিকদের একটি অংশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সেখানে বক্তব্য দেন এবং রোজিনাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।

তার আগে ওসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে রোজিনার ছোট বোন সাবিনা পারভীন সুমী বলেন, “ও অসুস্থ। ওর শরীর ভালো না। গায়ে জ্বর। সকালে টিকা নিয়েছে। ওর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।”

সচিবালয়ে কী ঘটেছে জানতে চাইলে সাবিনা বলেন, “সোর্সের কাছ থেকে ও কিছু ডকুমেন্ট পায়। এরপর স্বাস্থ্য সচিবের রুমে যাবে, সেজন্য কনস্টেবল মিজানকে বলে। উনি বলছে যে, ‘কেউ নাই, আপনি ভেতরে বসেন’। তখন আপু বলে যে, ‘না আমি বসব না। আমি কিছু তথ্য নিতে আসছি।’ এরপর মিজান বলে, ‘আপনি ভেতরে বসেন অসুবিধা নাই।

“এর কিছুক্ষণ পর কনস্টেবল মিজানসহ দুই তিনজন এসে ওর ব্যাগ কেড়ে নেয়। বলে যে, ‘আপনি এতদিন অনেক রিপোর্ট করেছেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক নেতিবাচক রিপোর্ট করছেন। আপনাকে মাটিতে পুঁতে ফেলব’।”

পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রোজিনা ‘হয়রানির শিকার হচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করেন তার ছোট বোন।

মিজানসহ অন্যরা রোজিনার ব্যাগ কেড়ে নিয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তখন ব্যাগে কিছু ডকুমেন্ট ঢুকিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।”

সহকর্মীরা দেখছেন ‘আক্রোশ, হয়রানি’

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ শাহবাগ থানায় বলেন, “রোজিনা বেশ কিছুদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু আলোচিত রিপোর্ট করেছেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।

“এই সমস্ত রিপোর্টের কারণে, আমাদের ব্যক্তিগত ধারণা, তিনি এসব রিপোর্টের কারণে আক্রোশের শিকার হয়েছেন, অন্যরা আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এ কাজটি করেছে।”

মামলা হওয়ার পর বিক্ষোভের মধ্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক শাহবাগ থানায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মনে করি, সংবাদমাধ্যমে  ছলে-বলে-কৌশলে হয়রানি করে হামলা করার যে চেষ্টা, এটা সরকারের জন্য অন্তর্ঘাত হচ্ছে। এবং আমাদের জন্য মানার মত না।

“অবিলম্বে রোজিনার মুক্তি চাই। প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রথম আলো যা করার করব। আমরা আইনের পথে যাব, আমরা আদালত যাব। আদালতে ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করি।”

 

Share if you like

Filter By Topic