Loading...

সুখের সন্ধানে

| Updated: April 17, 2021 16:44:57


ছবিঃ ইন্টারনেট ছবিঃ ইন্টারনেট

‘সবাই তো সুখী হতে চায়, তবু কেউ সুখী হয় কেউ হয় না’, কিংবা, ‘সুখেরই পৃথিবী সুখেরই অভিনয়, যতই আড়াল রাখো—আসলে কেউ সুখী নয়’— সুখ নিয়ে বাংলা গানের ভুবনে যে কয়টি অনবদ্য সৃষ্টি, সে তালিকায় নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ দু'টো গানের চরণ।

সুখ নামের ‘বস্তু’টি যতই অধরা হোক, তবুও কি আমরা চাই না সুখী হতে? চাই। সব সময়ই চাই। সুখকে হয়তো নির্দিষ্ট কোনো প্রকারের সীমাবদ্ধতায় ফেলা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে কত সুখ আছে, তার ইয়ত্তা সত্যিই নেই। তবে, আত্মিকভাবে বা ভেতর থেকে সুখী হওয়া বরাবরই বেঁচে থাকার অন্যতম নিয়ামক। তাই আমরা আমাদের আজকের আলাপে মূলত এই বিষয়টি বয়ান করব।

মানুষ ‘প্রয়োজন’ শব্দটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে, বলাই বাহুল্য। কিন্তু কোন প্রয়োজনে ঠিক কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই অবগত থাকি না। আসলে ভেতর থেকে সুখ শব্দটিকে পোষ মানাতে চাইলে সব প্রয়োজনে সম প্রশ্রয় নীতি বর্জন করা জরুরি।

জগতে এমন অনেক বিশ্বাস সংক্রান্ত কথা আছে, যা আসলে সব সময় সব মানুষের জন্য সঠিক নয়। যে বা যারা নির্দিষ্ট কিছু প্রচলিত কথার সূত্র ধরে নিজেকে পরিচালনার চেষ্টা করে, তারা কখনোই ভেতর থেকে সুখী হতে পারে না।

নীলের চাইতে সাদা ভালো অথবা সাদার চাইতে নীল। নীল-সাদার এই তুলনা কি নীল অথবা সাদা রঙে কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারল আদৌ? না, পারেনি। বরং, বাড়িয়েছে তর্ক, বেড়েছে শুধু অগভীর যুক্তি। ঠিক তেমনই, আমরা যখন নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করি, তখন আদতে কোনো ইতিবাচক ফলাফল ঘটে না; ঘটে অন্যের সামর্থ্যে নিজেকে প্রতিযোগিতায় ফেলে নিজের সক্ষমতার দেয়াল ভেঙে চুরমার করা। সুখকে মনের বশে আনতে চাইলে এ বিষয়টিকে অবশ্যই বর্জন করা উচিত।

কোনো ব্যক্তি যখন সবাইকে খুশি করার দায়িত্বটুকু নিজের কাঁধে সঁপে দেন, তখন মানসিক প্রশান্তিতে থাকা প্রায়ই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। সবার জন্য আমি হয়ে পড়লে, দিন শেষে আমার জন্য আর কোনো ‘আমি’ অবশিষ্ট থাকে না। তাই সাহায্য-সহযোগিতার হাত অন্যের জন্য সব সময় বাড়িয়ে রাখতে আপত্তি নেই, তবে সেই হাত যেন সময়মতো নিজেকেও তুলে ধরতে পারে, সেটুকু খেয়াল রাখা জরুরি।

সুখ ব্যাপারটিকে নিজের মধ্যে অনুভব করার আরেকটি অন্যতম পন্থা হচ্ছে — নিজের সঙ্গে কথা বলা। এই কথা বলার ধরন হতে পারে বিভিন্ন রকম। নিজেকে সময় দিয়ে, কোনো বিষয়ে ভাবনা কিংবা লিখে রাখাও এই কথোপকথনের অংশ। আর মানুষ যখন নিজের সঙ্গে কথা বলে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সে নিজেকে বুঝবার চেষ্টা করে। নিজেকে বুঝতে পারাটাও সুখ আনয়নে দুর্দান্ত উপায়।

মানসিকভাবে প্রশান্তিতে থাকতে আরেকটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে — অন্যের অহেতুক সমালোচনা না করা। ব্যক্তি যখন বেশির ভাগ সময় অন্যের ত্রুটি প্রসঙ্গে নিজেকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে, তখন খুব সহজেই তার চোখ নিজ থেকে অনেকটাই দূরে সরে যায়, আর এতে করে ভেতর থেকে স্বস্তিতে থাকা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়ে।

দ্রুত যেকোনো কিছু হাসিলের ভাবনা সর্বদাই মানুষকে সুখ হতে দূরবর্তী করে। তাই, শান্তি আনয়নে অপেক্ষা চর্চা হতে পারে একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

আত্মপক্ষ সমর্থনে অনেকেই নানাবিধ অজুহাতের সহায়তা নিয়ে থাকেন। ছুতো দিলেই যেন সমস্ত দোষ ঢাকা পড়ে যায়! মূলত, হরেক রকম অজুহাত দিনকে দিন মানুষের সুখী হওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে মাত্র।

সুখী হওয়ার প্রশ্নে অন্যতম এক বিপত্তির নাম হতে পারে — অতিরিক্ত আত্ম-জিজ্ঞাসা। বারবার নিজেকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা একধরনের অসুখের মতো; যা মানুষকে কখনোই ইতিবাচক কিছু দিতে পারে না। ব্যক্তি যখন নিজেকে নিজের কাছে কেবল প্রশ্নকেন্দ্রিক এক সত্তা হিসেবে উপস্থাপন করে, তখন সমাধান তো দূরের কথা, নিজের ভালো থাকার পথগুলোই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে।

অতীতের অবস্থান যখন অতীতের চেয়ে বর্তমানে বেশি হয়ে দাঁড়ায়, সুখ তখন পালাতে চায়। ব্যক্তির অতীত প্রিয় মানুষের সংখ্যা বরাবরই চোখে পড়ার মতো। আর পূর্বে ঘটে যাওয়া যাবতীয় সব নেতিবাচকতা যখন একজন মানুষ প্রতিদিন তার স্মরণে আনে, তখন তার বর্তমানের অনেক সুন্দর কিছুই জীবন থেকে ফসকে যায়। যার দরুন সুখ প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সে বঞ্চিত হয়। তাই, বর্তমান নিয়ে বাঁচার তৃষ্ণাও একজন মানুষের ভেতরকার সুখ বৃদ্ধিতে খুব বেশি দরকার।

সুখ না কোনো সদাই-পাতির ব্যাপার, না অর্থের বিনিময়ে পাওয়া কিছু, তাই তালিকা করে এর সন্ধান পাওয়ার চিন্তা করাটাও সুখ পরিপন্থী। সুখের মূল মর্মটুকু যদি নিজেদের ভেতরে স্থাপন করা যায়, এবং নিজেকে বোঝানো যায়, সুখ প্রাপ্তির পোক্ত বীজ মূলত আমাদের ভাবনায়, তবে সুন্দর এই পৃথিবীর সব আনন্দের রসদ প্রাপ্তির খনি হতে পারে মানুষের মন।

সঞ্জয় দত্ত বর্তমানে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

ই-মেইল: [email protected]

Share if you like

Filter By Topic