Loading...

যেভাবে গ্রাহকের টাকা হাতিয়েছিলেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা

| Updated: February 26, 2021 19:10:11


বাংলাদেশ ব্যাংক।রয়টার্স ফাইল ছবি বাংলাদেশ ব্যাংক।রয়টার্স ফাইল ছবি

গ্রাহকের স্বাক্ষর জাল করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা কী করে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন, সেই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

জালিয়াতির ওই ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালে। ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে বিষয়টির প্রমাণও মেলে। কিন্তু ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছিল।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ জানিয়ে টাকা ফেরত পান সেই গ্রাহক।খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ওই প্রতিবেদনে সেই বেসরকারি ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। গ্রাহকের নাম বলা হয়েছে ফেরদৌসি জামান।

২০১৬ সালে তিনি ৬ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা জমা দিয়ে ওই ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ২০১৮ সালের শেষের দিকে টাকা তুলতে গেলে জানানো হয়, ওই অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই।

অথচ ব্যাংকের দেওয়া সর্বশেষ হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ফেরদৌসির ওই অ্যাকাউন্টে তখন ৫ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ১৩৯ টাকা থাকার কথা।

ফেরদৌসির কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বীকার করেন, জালিয়াতির মাধ্যমে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো হয়েছে। এর দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও তিনি দেন।

সেই সঙ্গে ওই ঘটনাটি প্রকাশ না করতে গ্রাহককে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিনের টাকা ফেরত না পেয়ে ফেরদৌসি জামান বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস হটলাইন ১৬২৩৬ নম্বেরে ফোন করে অভিযোগ জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বিভাগ বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামলে বেসরকারি ব্যাংকটি প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে দেখতে পায়, সব কিছু জেনেও ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা না দেওয়ার ইচ্ছা থেকে মিথ্যাচার করছিল।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্মসহ আনুষঙ্গিক কাগজ-পত্র পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পায়, ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে ওই জালিয়াতির ঘটনায় তৎকালীন অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সেন্টার ম্যনেজার ‘সরওয়ারকে দায়ী করা হয়েছে।

সারওয়ার গ্রাহকের ফোন নম্বর সরিয়ে নকল ফোন নাম্বর বসান। তারপর গ্রাহকের নামে চেক বই তোলেন। গ্রাহকের সই জাল করে টাকা উঠিয়ে ব্যাংক থেকে লাপাত্তা হয়ে যান।

আর ওই চুরিতে ব্যাংকের আরো ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সারওয়ারকে সহযোগিতা করেন বলে ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তেই উঠে আসে।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেয়, ওই গ্রাহকের টাকা ব্যাংককে ফেরত দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ফেরদৌসি জামান ৫ কোটি ১৬ লাখ ৯ হাজার ৫৫৯ টাকা ফেরত পান।

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার ৪৯৯টি অভিযোগ পায়। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৯৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে।

মোট অভিযোগের ৫৭ শতাংশ আসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে, আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে আসে ১৯ শতাংশ।

২০১৮-২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ৪৪২টি অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে জনতা ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে।

মোট ৫ হাজার ৪৯৯টি অভিযোগের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসে টেলিফোনের মাধ্যমে। ৫৩ শতাংশ অভিযোগ লিখিতভাবে করা হয়। আর সাড়ে ৩ শতাংশ অভিযোগ অনলাইনে এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অভিযোগ মোবাইল ফোনে জমা পড়ে।

এসব অভিযোগের মধ্যে ২৯ শতাংশই ছিল সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত, ৯ শতাংশ ছিল কার্ড নিয়ে। আর ৬ শতাংশ গ্রাহক ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে এবং ৬ শতাংশ গ্রাহক সেবায় অসন্তুষ্টি জানিয়েছে অভিযোগ করেন।

Share if you like

Filter By Topic