Loading...

ছাপার অক্ষরে বন্ধুত্ব

| Updated: August 01, 2021 09:44:33


ছাপার অক্ষরে বন্ধুত্ব

“বই-ই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু” একথা হরদমই শোনা যায়। আবার বন্ধুত্বকে পুঁজি করে লেখা হয়েছে, বন্ধুত্বের শুভ-সুন্দর দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে এমন বেশ কিছু বই লেখা হয়েছে। বন্ধুত্বের আভায় আলোকিত সুপাঠ্য এসব বইয়ের কয়েকটি নিয়েই আজ আলোচনা করা যাক।

দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ হাকলবেরি ফিন

মার্ক টোয়েনের লেখা একটি কালজয়ী বই হচ্ছে এই হাকলবেরি ফিনের দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনী। বইয়ের মূল চরিত্র হাকলবেরি ফিন হচ্ছে মূলত দুস্থ এক কিশোর, যার মদ্যপ বাবা তাকে লেখাপড়ার সুযোগ না দিয়ে বনের মধ্যে এক কুটিরে বন্দি করে রাখে। হাকলবেরি ফিন, বা সংক্ষেপে হাক ফিন একটা সময় সেখান থেকে পালিয়ে যায়, আশ্রয় নেয় মিসিসিপি নদীর মাঝখানে জ্যাকসন্স আইল্যান্ড নামের একটি দ্বীপে। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় জিম নামের এক ক্রীতদাসের। জিমের মালকিন তাকে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করায় পলাতক হওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না।

অসমবয়সী এই দুই বন্ধুর দুঃসাহসিক অভিযান নিয়েই গোটা বইটি। গল্পের এক পর্যায়ে জিম ধরা পড়ে গিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বন্দি হলেও হাক নিজের বন্ধুকে সফলভাবে মুক্ত করে নিয়ে আসে। বন্ধুত্ব যে জাত-ধর্ম-বয়স কিছুরই তোয়াক্কা করে না, এই বইটি সেই শিক্ষাই দেয়।

হ্যারি পটার সিরিজ

জে কে রোলিংয়ের লেখা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই উপন্যাসের সিরিজটির গোটাটাই আবর্তিত হয়েছে তিন বন্ধুর কাহিনী ঘিরে। হ্যারি পটার, রোনাল্ড উইজলি, হারমায়োনি গ্রেঞ্জার- এই তিন বন্ধুর যাত্রাটা শুরু হয় তাদের এগারো বছর বয়সে, জাদুর স্কুল হগওয়ার্টসের উদ্দেশে প্রথম রওনা দেওয়ার পর। সেই বন্ধুত্বের পথ বরাবরই ছিল বিপদসংকুল, অথচ এই তিনটি ছেলেমেয়ে কখনওই একে অপরের হাত ছাড়েনি। তিন মাথার কুকুর হোক, হোক ভয়ংকর বিষাক্ত ব্যাসিলিস্ক, কিংবা ঠাণ্ডা মাথার কালো জাদুকর লর্ড ভোল্ডেমর্ট, এই ত্রিমূর্তিকে আলাদা করার সাধ্য ছিলো না কারোরই।

বইটিতে শুধু এই তিনজনের বন্ধুত্বই নয়, বরং পুরো স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব ছিল, যে বন্ধুত্বের জোরে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে হারিয়ে দিতে পেরেছিল মহাপরাক্রমশালী ভোল্ডেমর্টের বাহিনীকে, সেই বিস্তৃত পরিসরের বন্ধুত্বও সমান গুরুত্ব পেয়েছে। বন্ধুদের প্রতি চোখ বন্ধ করে ভরসা আর বিশ্বাসের বিষয়টি যেন নতুন করে চেনায় এই জাদুকরী সিরিজটি!

থ্রি মিস্টেকস অফ মাই লাইফ

চেতন ভগতের লেখা জনপ্রিয় এই বইটির কাহিনীও তিন বন্ধুর বন্ধুত্বকে নিয়েই। ওমি, গোবিন্দ আর ঈশান নামের তিনজন ছেলে, ভারতের গুজরাটের এক ছোট শহরে তাদের বাস। শৈশব থেকেই যদিও তারা একজন আরেকজনের প্রাণের বন্ধু, কিন্তু তিনজনের স্বভাব-চরিত্র, পারিবারিক-আর্থিক অবস্থান ইত্যাদি অনেকটাই আলাদা। এই তিন বন্ধু একসাথে একটি ব্যবসা শুরু করে, খেলার সরঞ্জামের ব্যবসা। কিছুটা জমে উঠতে না উঠতেই ভিন্নমতের জের ধরে তিন বন্ধুর মধ্যে শুরু হয় মন কষাকষি, আর এর মধ্যেই কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। আপোস ও ত্যাগের গুরুত্ব বন্ধুত্বের মত সম্পর্কে কতটুকু জরুরি, বইটি আসলে সেটিই নির্দেশ করে।

আমি তপু

তপু। তেরো বছরের এক কিশোর, যার নিজের বয়স চল্লিশ বছর বলে মনে হয়। তপুর বাবা মারা যান, যখন তার বয়স দশ বছর। তার পর থেকেই তপুকে কারণে-অকারণে নিজের পরিবার, বিশেষ করে মায়ের কাছ থেকে নানান শারীরিক-মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। এত কম বয়সে এত প্রতিকূলতা সহ্য করতে করতেই তপু নিজেকে বুড়ো বলে মনে হতে শুরু করে। বাইরের জগতের কাছে একসময়ের মেধাবী তপু হয়ে যায় বখাটে একটি ছেলে।

ঠিক সেই সময় তপুর জীবনে আসে প্রিয়াংকা নামের একটি মেয়ে। সর্বক্ষণ আনন্দে মশগুল হয়ে থাকা ছোটখাটো এই মেয়েটির সাথে ঘটনাচক্রে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তপুর। অনেক বছর পর তপুর মনটা আস্তে আস্তে নরম হতে শুরু করে, সে সত্যিকারের একজন বন্ধু পায়। প্রিয়াংকার জোরাজুরিতেই তপু জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ী হয়। হুট করেই আলোয় ভরে ওঠে তার জীবন।

সহজ-সুন্দর কৈশোরের বন্ধুত্বের গল্প পড়তে চাইলে নিঃসংকোচে পড়ে ফেলতে পারেন মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা এই বইটি।

‘দারুচিনি দ্বীপ’ ও ‘রূপালী দ্বীপ’

একদল ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের সেন্টমার্টিন’স দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার গল্পকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে বই দু’টির কাহিনী। বই দু’টি বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা শুভ্র সিরিজের অন্তর্গত।

এই দু’টি বইয়ে বন্ধুত্বের অনেকগুলো দিক দেখা যায়। প্রায় অন্ধ এক বন্ধুর প্রতি অন্য বন্ধুদের উপহাস, অথচ একই সাথে মমতাবোধ, এক দল বন্ধুবান্ধবের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক, স্বেচ্ছায় বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসা এক মেয়ের প্রতি তার অন্য বন্ধুদের মানসিক সহায়তা ইত্যাদি বন্ধুত্বের বেশ কিছু ক্ষেত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বইগুলো।

পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জিনিসগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব একটি। জীবনে হাজারখানেক পরিচিত মানুষের চেয়েও কয়েকজন খাঁটি বন্ধু পাওয়াটা বিশেষ সৌভাগ্যের একটি ব্যাপার। আর এই বিষয়টিই উপরিউক্ত বইগুলোর প্রত্যেকটির উপপাদ্য বিষয়। কাজেই, বন্ধু দিবসে নিজের বন্ধুত্বের কথা ভেবে চাইলে পড়ে নিতেই পারেন অসম্ভব সুন্দর এই বইগুলো।

শুভদীপ বিশ্বাস বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ, তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। [email protected]

Share if you like

Filter By Topic