Loading...

স্থিতিশীল হলেও খালেদা ‘পুরোপুরি সুস্থ নন’: চিকিৎসক

| Updated: June 20, 2021 17:51:59


ফাইল ছবি ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

শনিবার রাতে এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ফেরার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই চিকিৎসক এই কথা জানান।

তিনি বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ উনি (খালেদা জিয়া) স্থিতিশীল আছেন। তার মানে এই না যে, উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন।

“আমাদের মেডিকেল টিম যেটা এভারকেয়ার হাসপাতালে সুদক্ষ টিম আছে সেটা, দেশের বাইরে যারা আছেন এবং আমরা যারা আছি সবাই মিলে উনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসাটা আপাতত এখানে (বাসায়) রেখে চালিয়ে যাবো।”

কেন পরিপূর্ণ সুস্থতা ছাড়া তাকে বাসায় আনা হলো জানতে চাইলে খালেদার চিকিৎসক দলের প্রধান বলেন, “হাসপাতালে রাখাটা অনেক রিস্ক বেশি হয়ে যাচ্ছে সেজন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।

“তিন বার উনার রক্তে ইনফেকশন হয়েছে। প্রত্যেকটা ইনফেকশন হাসপাতালের অর্গানিজমে। অর্থাৎ আমরা যখন ব্লাড কালচার করি, সেই জীবাণু দেখতে পাই, সেই জীবাণুগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায় এটা কোত্থেকে আসছে।”

এই বিষয়ে অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী আরও বলেন, “উনার যদি আবার একটা ‘সিফসিস’ হয়, তাহলে উনাকে এতটুকু অবস্থায়…। আপনারা শুনেছেন যে বুকে দুইটা চেস্ট টিউব নিয়ে ২৪ ঘন্টা থেকেছেন।

“উনার পাশে দুইটা ব্যাগ লাগানো, সেখানে উনি দেখতে পারছে হেমোরেজ, রক্ত আসছে। উনি নিজে চোখের সামনে দেখতে পারছেন। সেগুলো নিয়ে উনি ১৮/১৯ দিন কাটিয়েছেন। আল্লাহর রহমত, উনি খুব দৃঢ়তার সাথে আমরা যেভাবে উনাকে বলেছি উনি সেভাবে আমাদের সাথে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য চিকিৎসাটা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।”

পরবর্তী চিকিৎসা ও অন্যান্য শারিরীক জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘উনার অসুখটা চিকিৎসায় একটা স্থিতি অবস্থায় এসেছে। উনি কিউর হয়ে ‍যাননি। উনার যেই হার্টের জটিলতা, কিডনির জটিলতা, লিভারের জটিলতা সেগুলো কোভিডের কারণে যে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছিল, সেই অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে। কিন্তু সেই অসুস্থতাগুলো রয়েই গেছে।

“সেগুলোকে এডরেস করার যে চিকিৎসা এবং যে প্রস্তুতি বা প্রক্রিয়া সেইগুলো আমরা কিন্তু এখনো পরিপূর্ণভাবে করতে পারিনি। যার জন্য একটা রিস্ক উনার থেকেই যাচ্ছে।“

খালেদা জিয়াকে বাসায় রেখে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “উনি অবজারভেশনে আছেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ পরে আবার আমাদের অপশন রাখতে হচ্ছে যে, উনাকে হসপিটাল নিয়ে রিভিউ করার প্রয়োজন হতে পারে।”

করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর বিভিন্ন জটিলতায় রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫৪ দিন চিকিৎসা শেষে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের বাসায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

তার উন্নত চিকিৎসা দেশে সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমরা একটা লেভেল পর্যন্ত উনার চিকিৎসাটা চালিয়ে কতগুলো জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু কতগুলো বিষয় আছে যেমন উনার যে লিভারের সমস্যা আমরা ধরতে পেরেছি, সেটা কোন স্টেইজে আছে এবং এমন সব সেন্টারে এসব অ্যাসেসমেন্ট হওয়া উচিত যেখানে আর্টিফিশিয়াল লিভার সাপোর্ট, আর্টিফিশিয়ালি অন্যান্য এডভান্স টেকনোলজি এ্যাপ্লাই করতে পারে।

“অসুস্থতা কিন্তু শুধু লিভারে থাকে না, খাদ্যনালীতে হয় যেটা সমস্ত শরীরে তার প্রভাব ফেলে। যেটাতে মেজর কতগুলো কমপ্লিকেশন হতে পারে।”

এই ধরনের প্রযুক্তি বা সেই ধরনের উন্নত চিকিৎসার সহায়তা বাংলাদেশে নেই উল্লখ করে তিনি বলেন, “আমাদের লিখিত প্রতিবেদনে সেটা বলেছি।”

খালেদা জিয়ার লিভারে অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উনার আগের যে অসুস্থতা ছিল, তার সাথে আমরা বিশেষ করে দেখেছি যে, লিভারের যে সমস্যাটা সেটা হচ্ছে ডি-কম্পোসেটেড লিভারের ফাংশনটা মাঝে মাঝে কম্প্রোমাইজ হয়ে যায়। তখন উনার এলবুমিন সিনথেসিস হয় এবং উনার কিডনি দিয়ে এলবুমিন বেশি বের হয়ে যায়।

“এই দুইটা কারণে উনার রক্তে এলবুমিন কমে যায়। আর লিভারের জটিলতার একটা অংশ হিসেবে উনার মাঝে মাঝে খাদ্যনালীতে মাক্রোস্পেসেফিক… যার জন্য উনার হিমোগ্লোবিন কমে যায়।”

বিদেশে নিয়ে যাওয়া জরুরি কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘উনার হার্টের কিছু কিছু টিট্রমেন্ট এ এডভান্সমেন্ট আমাদের দেশে আছে। কিডনি ট্রিটমেন্টের ওই ধরনের এডভান্সমেন্ট এখানে নেই, কিছু কিছু ম্যানেজ করা যায়।

‘‘কিন্তু লিভারের সমস্যা হয়ে যখন ডিকম্পোনসেশন হয়, সেই সমসার সার্বিক মূল্যায়ন করে স্টেটেজিং করে সেইগুলোর আনুসাঙ্গিক যে চিকিৎসা দরকার সেই টোটাল ট্রিটমেন্ট এবং সাপোর্ট আমাদের দেশে নাই।”

বিফিংয়ের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রখ্যাত ‘বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিম গুলশানের বাসায় তার চিকিৎসা শুরু হয়।

৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দুদকের করা দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।

তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিতৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নেন।

Share if you like

Filter By Topic