পশ্চিম আফ্রিকার মালির ২৫ বছর বয়সী এক নারী একসাথে নয়টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ডাক্তাররা ধরে নিয়েছিলেন তিনি সাতটি সন্তান প্রসব করতে যাচ্ছেন, কারণ তার স্ক্যান পরীক্ষায় তেমনটিই ধরা পড়েছিল।
হালিমা সিসে তার সন্তান প্রসব করেছেন মরক্কোয়- পাঁচ কন্যা এবং চার পুত্র। বিশেষ তত্ত্বাবধানে সন্তান প্রসবের জন্য মালির সরকার তাকে মরক্কোয় পাঠিয়েছিল।
"আমি খুবই খুশি," বিবিসিকে বলেন হালিমার স্বামী। "আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা সবাই ভাল আছে।"
আমেরিকার একজন নারী ২০০৯ সালে একসাথে ৮টি শিশুর জন্ম দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ নাম উঠিয়েছিলেন। একসাথে সর্বাধিক সংখ্যক জীবিত শিশুর জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে এতদিন এটাই ছিল গিনেসে নথিভুক্ত বিশ্বরেকর্ড।
এর আগেও একসাথে নয়টি শিশু প্রসবের ঘটনা নথিভুক্ত হয় - একটি অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭১ সালে এবং অন্যটি মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই সব কয়টি শিশু কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায়।
আমেরিকার মা নাদিয়া সুলেমানের আট সন্তান এখন বড় হয়েছে। তাদের বয়স ১২। তিনি গর্ভধারণ করেছিলেন আইভিএফ বা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে।
মালির স্বাস্থ্য মন্ত্রী ফান্টা সিবি এই "আনন্দময় ফলাফলের" জন্য মালি এবং মরক্কোর চিকিৎসক দলদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
হালিমা সিসে তার শিশুদের জন্ম দিয়েছেন মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় যে আইন বর্জা ক্লিনিকে, তার মেডিকেল পরিচালক অধ্যাপক ইউসেফ আলাউয়ি এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন এটি "অতি বিরল ঘটনা, খুবই অভিনব"- পূর্ণতা না পাওয়া শিশুগুলির প্রসবে সেখানে সাহায্য করেছেন ১০ জন ডাক্তার এবং ২৫ জন প্যারামেডিক বা সহযোগীদের একটি দল।
একেকটি শিশুর ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির ভেতর। তাদের এখন ''দুই থেকে তিন মাস" ইনকিউবেটারের ভেতর রেখে বড় করা হবে।
হালিমা সিসের গর্ভধারণের ঘটনাটি নিয়ে মালিতে বিপুল উৎসাহ তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে রয়টার্স বার্তা সংস্থা। এমনকি যখন খবর হয়েছিল যে তার গর্ভে সাতটি সন্তান রয়েছে তখনও এ নিয়ে বিশাল আলোচনা ও হৈচৈ চলেছিল।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির চিকিৎসকরা হালিমার স্বাস্থ্য এবং প্রসবের পর শিশুগুলোর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। ফলে সরকার এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়।
মালির রাজধানী বামাকোর হাসপাতালে হালিমা দুই সপ্তাহ থাকার পর ৩০শে মার্চ তাকে মরক্কোয় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, জানান দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. সিবি।
মন্ত্রী জানান, মরক্কোর ক্লিনিকে পাঁচ সপ্তাহ থাকার পর মঙ্গলবার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন হালিমা সিসে।
অধ্যাপক আলাউয়ি বলছেন, মিজ সিসেকে যখন তাদের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল তখন তিনি ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্তা ছিলেন। তার চিকিৎসক দলটি ৩০ সপ্তাহ পর্যন্ত তার গর্ভাবস্থা টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
হালিমা সিসের স্বামী, আদজুদান্ত কাদের আর্বি এখনও মালিতে রয়েছেন। সেখানে তিনি তাদের বড় মেয়ের দেখাশোনা করছেন। তিনি বলেছেন মরক্কোয় তার স্ত্রীর সাথে তিনি সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখেছেন এবং পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন।
"আল্লাহ আমাদের এই শিশুদের দিয়েছেন। তাদের কী হবে সেই সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। আমি তাদের নিয়ে চিন্তিত নই। ঈশ্বর যখন কিছু করেন, তিনি জানেন কেন তিনি সেটা করছেন," তিনি বিবিসি আফ্রিক বিভাগকে বলেন।
তিনি আরও বলেন, তার পরিবার যেধরনের সহায়তা পেয়েছে তাতে তিনি আপ্লুত।
''সবাই আমাকে কল করছে! সব্বাই! মালির কর্তৃপক্ষও আমাকে ফোন করে তাদের আনন্দ প্রকাশ করেছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি...এমনকি প্রেসিডেন্টও আমাকে ফোন করেছেন।"
সোর্স: বিবিসি বাংলা