Loading...

ধরায় এল খুশির ঈদ

| Updated: May 14, 2021 20:42:59


ফাইল ছবি ফাইল ছবি

ঈদের দিন সবার আগে বাবা ঘুম থেকে উঠতেন। সবাইকে ডেকে ঘুম ভাঙাতেন। তারপর নামাজ পড়তে যেতেন। আমাদের কাজ ছিল, ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা শেষে গোসল করে নতুন জামা পরে ফেলা। এরপর শুরু হতো সালামি ওঠানো। বাবা দিতেন সবার আগে। তারপর এক এক করে বাড়ির সব বড়দের কাছে যেতাম। ঈদের নামাজে যেতাম বাবার হাত ধরে। এখন বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তবে আমার সন্তানরা আছে। তাদের সাথেই যতটুকু পারা যায় ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।

এভাবেই ঈদের স্মৃতিচারণ করছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আ. আলিম।

অনেকটা তাঁর মতোই ঈদের স্মৃতিচারণ করেন বর্তমানে জার্মানিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নাজমুল খান আশিস।

তিনি বলেন, “ছোটবেলায় আমার ঈদগুলো হতো অনেক বেশি বর্ণিল। ঈদের দিন সকালটা শুরু হতো মায়ের হাতে রান্না করা সেমাই খেয়ে। তারপর গোসল করে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের নামাজ শেষ করে ঈদের নতুন জামা গায়ে দেবার আগ পর্যন্ত এক দৌড়ে বাসায় আসতাম। তারপর ঈদের জামা পরে সব কাজিনদের বাসায় যাওয়া। ঈদের সারাটা দিন একসাথে ঘুরে বেড়ানো আর খেলা করা”।

তিনি যোগ করেন, “ছোটবেলার একেকটা ঈদে যে পরিমাণ আনন্দ-ফূর্তি করতাম, এখন মনে হয় জীবনের বাকি সব ঈদগুলোর আনন্দ একত্র করলেও তার ধারেকাছে হবে না।”

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। একমাস সিয়াম-সাধনার পর খুশির বারতা নিয়ে ধরায় এই দিনটি আসে। পৃথিবীর অন্যসব দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছেও দিনটি একইসাথে মহিমান্বিত, তাৎপর্যপূর্ণ এবং আনন্দের।

সকল শ্রেণি-পেশার, সব বয়সের মানুষের কাছে দিনটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। ঈদ নিয়ে পুরো দেশ জুড়েই থাকে একই চিত্র। আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই পরিবারের ছোটদের মাঝে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যায়। চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে যার শুরু, সে রাতকে ডাকা হয় ‘চাঁদরাত’। সন্ধ্যার পরপরই রান্নাঘরেও নানা পদ আর স্বাদের খাবার রান্না শুরু হয়। আতশবাজি, গান, হৈহুল্লোড়, রাত করে আড্ডা দিয়েই চাঁদরাত কাটে। ঈদের দিন সকাল সকাল গোসল করে পাঞ্জাবি পড়ে ঈদগাহে যাওয়া। তারপর ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি করা। পরে বাসায় ফিরে নতুন জামা পরে ঘুরতে বের হওয়াই যেন ঈদের দিনের স্বাভাবিক চিত্র।

তবে ঈদের দিনে পরিবারের ছোটদের অন্যতম আনন্দের বিষয় ‘ঈদের সালামি’। সাধারণ পরিবারের বড়রা ছোটদের সালামি দেন। এটি ‘ইদি’ নামেও পরিচিত। বড়দের পায়ে সালাম করে ‘ঈদ মোবারক’ বললেই কাজ শেষ। কমবেশি যেমন হোক, ছোটদের কিছু চাইই চাই। বাবা-মা, ভাই-ভাবি, চাচা-চাচি, মামা-মামিদের থেকে ‘ইদি’ পায় ছোটরা। ঘরে ঘরে এটি যেন ঈদের দিনের দেশের সবচেয়ে পরিচিত সংস্কৃতি।

বিশেষত মেয়েদের ঈদ আনন্দের অনেকটাই যেন মেহেদিতে হাত রাঙানোর মাঝে ফুটে ওঠে। চাঁদরাতে কেউ যান পার্লারে, কেউ আবার ঘরে বসে নিজেই মেহেদিতে হাত রাঙিয়ে ফেলেন। আর জটলা করে একে অন্যের হাতে বহু নকশা ফুটিয়ে সে রঙ পাকা হবার অপেক্ষা যেন ঈদের আনন্দের মতোই সুন্দর। সবমিলিয়ে বছরের এক ব্যস্ততম দিন পার করার নামই যেন ঈদ।

বর্তমান সময়ে গ্রামে কিংবা শহরে অনেকটা এভাবেই ঈদ-উল-ফিতর পালিত হয়। কিন্তু সময়ের সাথে ঈদেরও রং বদলায়। বয়সের সাথে যেন বদলায় ঈদের আনন্দ উদযাপনের ধরন। তবে শৈশব, কৈশোরের ঈদ আনন্দের স্মৃতিই সবার মনে জেগে থাকে আজীবন।

একটা সময় যখন বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেল থাকত না আমাদের বসার ঘরে, তখন ঈদ আনন্দের বার্তা নিয়ে আসত একটি গান। সে গানের সুরে সবাই জেগে উঠত একটি নতুন আনন্দের সম্ভাবনায়। সেই গানটি ছিল-

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।

তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ

দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ’

 কবি নজরুল ইসলামের এই গানের মতো করেই যেন এই ধরায় ঈদ আসে। তবে গত এক বছর ধরে কেমন যেন খেই হারানো এক ভিন্ন পরিবেশে, অচেনা সময়ে এই ঈদ আসে। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা বহু পরিবারে আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। অনেকে তাদের স্বজন হারিয়ে শোকে মুহ্যমান। অনেকে হারিয়েছেন তাদের একমাত্র সম্বল চাকরিটাও। মানসিক, শারীরীক, আর্থিক দিক থেকে পুরো পৃথিবীই ক্ষতিগ্রস্ত।

তবুও মুসলমানদের কাছে ঈদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক অসীম নেয়ামত। ঈদ ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবার কাছে পরম আরাধ্যের। আর তাই প্রত্যাশা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের চাদরে ঢাকা পড়ুক সকল দুঃখ। উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে । ঈদ হোক সকলের। ঈদ হোক ভালোবাসার।

ফরহাদুর রহমান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত। ইমেইল- [email protected]

Share if you like

Filter By Topic