নিখোঁজ হয়ে আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান আট দিন গাইবান্ধার একটি বাড়িতে ছিলেন বলে ওই বাড়ির এক বাসিন্দা জানিয়েছেন। তবে ওই বাড়ির আশপাশের কেউ তা টেরই পায়নি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।
আট দিন ধরে নিখোঁজ ত্ব-হা আদনানের খোঁজ শুক্রবার পাওয়া যায় তিনি রংপুরে শ্বশুর বাড়িতে ফেরার পর। তখন রংপুর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেছিলেন, ত্ব-হা আদনান গাইবান্ধায় তার এক বন্ধুর বাসায় ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামে বন্ধু সিয়াম ইবনে শরিফের বাড়িতে ছিলেন ত্ব-হা আদনান। তার সঙ্গে ছিলেন আবদুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও আমির উদ্দিন নামে আরও তিনজন।
রংপুর থেকে একটি ভাড়া মাইক্রোবাসে ঢাকার পথে রওনা হয়ে গত ১০ জুন রাত থেকে ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা নিখোঁজ বলে ১১ জুন রংপুর কোতোয়ালি থানায় করা তার মা আজেদা বেগমের জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
সিয়ামের মা নিশাত নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি প্রাইভেটকারে গত ১১ জুন শুক্রবার দুপুরে ত্ব-হা আদনান তার তিনজন বন্ধুকে নিয়ে তাদের বাড়িতে ওঠেন।
শনিবার দুপুরে পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেকটা নির্জন ওই বাড়ির সামনে ফাঁকা। আধাপাকা এই বাড়িতে একাই থাকেন সিয়ামের মা নিশাত নাহার।
সিয়ামের বাবা শরিফ নেওয়াজ খান এক বছর আগে মারা গেছেন। সিয়াম চাকরি সূত্রে থাকেন রংপুরে। তার একমাত্র বোন স্বামীর সঙ্গে থাকেন ঢাকায়।
সিয়ামের চাচা বোয়ালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মাজেদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিয়াম রংপুরের লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তখন ত্ব-হা আদনানের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
সিয়ামের মা নিশাত নাহার বলেন, যে প্রাইভেটকার ১১ জুন আদনানদের নামিয়ে দিয়েছিল তার বাড়িতে, ১৮ জুন সকালে সেই গাড়িটি এসে তাদের নিয়ে যায়।
ত্ব-হা আদনান কেন এসেছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাড়িতে এসেই সে আমাকে বলে- আন্টি আমাকে কেউ হয়ত ফলো করছে। এ কারণে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আপনার এখানে কয়েকদিন থাকবো।
“তখন আমি বললাম, থাক, অসুবিধা কী। এর আগেও সে একাধিকবার আমার বাড়িতে এসেছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।”
নিশাত নাহার জানান, এই আট দিনে ত্ব-হা আদনান কিংবা তার সঙ্গীরা কখনও বাড়ির বাইরে যায়নি। ঘরের ভেতেই ‘নামাজ-কালাম’ পড়ে সময় কাটিয়েছে।
সিয়ামের চাচা চেয়ারম্যান মাজেদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাড়ির পাশের বাসায় ত্ব-হা আদনানের থাকার বিষয়টি তিনিও জানতেন না।
প্রতিবেশী কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারাও জানায়, সিয়ামের বাড়িতে ত্ব-হা আদনানদের থাকার বিষয়টি তারাও জানতেন না।
পাশের বাড়ির তরুণ আসিব মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১১ জুন ওই বাড়িতে একটি কার ঢুকতে দেখেছি। কিন্তু কারা এসেছে, কী জন্য এসেছে, সেটা জানতাম না।”
পশ্চিম পিয়ারাপুর গ্রামের আকবর উদ্দিন বলেন, “সিয়ামদের বাড়িতে অনেক সময় তাদের আত্মীয়-স্বজনরা আসে-যায় দেখেছি। সেদিনও ওদের বাড়িতে একটি কার ঢুকতে দেখেছি। কিন্ত কারা এসেছে, কতদিন থেকেছে, তা আমরা বলতে পারব না।”
রংপুরের এক সময়কার ক্রিকেট খেলোয়াড় ত্ব-হা আদনান পড়াশোনা করেছেন কারমাইকেল কলেজে। দর্শনে স্নাতকোত্তর করে বাড়ির পাশের আল জামেয়া আসসালাফিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন তিনি।
তিনি অনলাইনে আরবি পড়ানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে জুমার খুতবা দিতেন। এর মধ্যেই ধর্মীয় বক্তা হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার ফেইসবুকে পেইজের অনুসারীর সংখ্যা ৫২ হাজারের বেশি।
আদনানের পারিবারিক বাড়ি রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায়। তবে তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন।
আদনানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার পল্লবীর লালমাটি এলাকায় থাকেন। সেখানে একটি বালিকা মাদ্রাসার কার্যক্রম চলে, এর মূল উদ্যোক্তা ত্ব-হা আদনান।
দুই স্ত্রী বলেন, ১০ জুন ভোররাতে তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আদনানের সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল, তখন তিনি ঢাকার গাবতলী এলাকায় ছিলেন।
তবে পুলিশ বলছে, সেদিন আদনানরা গাবতলী থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে গাইবান্ধায় চলে গিয়েছিলেন।
ত্ব-হা আদনানের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও প্রকাশ্যে আসার পর তিনি বা তার পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে কিছুই বলছেন না।