Loading...

সাবধান! ফেসবুক–টুইটারে তথ্য বেহাত হতে পারে

| Updated: March 03, 2021 21:25:30


সাবধান! ফেসবুক–টুইটারে তথ্য বেহাত হতে পারে

‘আপনি দেখতে কোন হলিউড তারকার মতো তা জানতে এখানে ক্লিক করুন’—এমন কৌতূহল জাগানো ক্লিকবেইট এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহরহ দেখা যায়। কৌতূহলের বশে অনেকেই ক্লিক করে ফেলেন এ ধরনের লিংকে। শুধু তাই নয়, নিজের সব সময়ের অবস্থানও শেয়ার করে দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু এসব ক্লিকবেইট, অপরিচিত ওয়েবসাইট ও লোকেশন শেয়ারিং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষাকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়াতে ইন্টারনেট লিটারেসি ও সামাজিক মাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রভাব বর্তমান জীবনে কতটা, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কাছে-দূরে, দেশে-বিদেশে যোগাযোগের জন্য সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট, টুইটারসহ আরও নিত্যনতুন অ্যাপ যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। তবে এই বিশালসংখ্যক ব্যবহারকারীর অধিকাংশই জানেন না, কীভাবে সামাজিক মাধ্যমগুলোয় ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে ছোট্ট একটি অবহেলাও বিশ্ব জুড়ে হ্যাকারদের কাছে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার করার পথ করে দিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সাইবার হামলার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

মনে রাখা জরুরি, অন্তর্জালের জগতে যা একবার প্রবেশ করে, তা সেখানকার অংশ হয়েই থেকে যায় চিরদিনের জন্য।

অনন্যা স্যান্যাল একজন ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনাল ও যোগাযোগকর্মী। তিনি সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার রোধে মাধ্যমগুলোর সঠিক ব্যবহার ও পরিচালনার নিয়মকানুনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়া ও তা সব পর্যায়ের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও নতুন ব্যবহারকারীদের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ও ডিভাইসের সহজলভ্যতার সঙ্গে সবাই কোনোমতে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলা শিখলেও তাতে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা কতটুকু থাকল, তা বেশির ভাগ ব্যবহারকারীরই অজানা। সর্বস্তরের ব্যবহারকারীর কাছে যেন এসব করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলোর তথ্য সহজলভ্য হতে পারে, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় নিরাপদ থাকতে হলে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ ব্যক্তিগত তথ্য শুধুমাত্র নাম, জন্মস্থান, বয়স, বাসস্থান এগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। ছবি বা কোনো তথ্য প্রকাশ করা, বর্তমান লোকেশন শেয়ার করা—এসব তথ্য যদি ‘পাবলিক’ বা সবার জন্য উন্মুক্ত করা থাকে, তবে যেকোনো ব্যক্তির কাছে সহজেই ব্যবহারকারীর নিত্যকার কিছু তথ্য চলে যেতে পারে। এ ছাড়া যেকোনো প্ল্যাটফর্মে কোনো পাসওয়ার্ড বা লেনদেন আইডি বিনিময় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত পোস্ট বা ছবি শেয়ার করলেও তা হ্যাকারদের ব্যক্তিগত তথ্যলাভ সহজ করে দেয়। যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা না নিশ্চিত করা থাকে, তবে তা অপরাধী চক্রের হাতে পড়ে যেতে পারে। এবং এ তথ্য দিয়ে তারা পরিচয় চুরি, ব্ল্যাকমেইলিং, ছবি বিকৃতকরণ ও অন্যান্য বিভিন্ন সাইবার অপরাধ করতে পারে, যার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যার নর্টন ইন্টারনেটে সাইবার নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে লক্ষ রাখতে বলে। এদের মাঝে রয়েছে সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কিছু উপায়।

 

বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য প্রোফাইলে না রাখা

সামাজিক মাধ্যমগুলো বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয় সাধারণ তথ্যের বাইরেও প্রচুর ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে পারে, কিন্তু সেসব তথ্য প্রদানে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যেমন, বাসস্থানের ক্ষেত্রে পুরো ঠিকানা না দিয়ে শুধুমাত্র জেলা বা বিভাগের নাম উল্লেখ করা।

 

প্রাইভেসি সেটিংসে দক্ষতা অর্জন

কমবেশি সব সামাজিক মাধ্যমেই ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান নিয়ন্ত্রণ ও সে তথ্যের কতটুকু কোন পক্ষ দেখতে পাবে, তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারকারীর হাতে থাকে। কে বা কারা কোন কোন তথ্য, পোস্ট, ছবি বা লোকেশন দেখতে পারবে, তা প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে নিশ্চিত করে নেওয়া যায়। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় ব্যবহারকারীর সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

 

পাসওয়ার্ড হতে হবে শক্তিশালী

একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। পাসওয়ার্ড বানানোর সময় বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, বিভিন্ন প্রতীক বা চিহ্ন, সংখ্যার ব্যবহার করলে তা শক্তিশালী হিসেবে ধরা যায়। জন্মতারিখ, প্রিয়জনের নাম অথবা সহজেই অনুমেয় কোনো শব্দ বা সংখ্যা না ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। একই পাসওয়ার্ড একাধিক সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহার না করা ও কোনোভাবেই ডিভাইসে তা সংরক্ষণ না করার বিষয়টির ওপরও জোর দেন তারা।

 

বন্ধু তালিকায় কারা আছেন? কজনই বা পরিচিত?

কিছু দিন আগেও ব্যবহারকারীদের মাঝে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলত, কার বন্ধুতালিকায় বন্ধু বা অনুসারীর সংখ্যা কত বেশি। ইন্টারনেট লিটারেসি ও এ সম্পর্কে সচেতনতা আগের চেয়ে কিছুটা বাড়ায় ব্যবহারকারীরা এখন বোঝেন, যত বেশি মানুষের সঙ্গে সংযুক্তি থাকবে সামাজিক মাধ্যমে ততই কমতে থাকবে শেয়ারকৃত তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ। তাই বন্ধুতালিকায় কে থাকছে, তা ব্যক্তিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

 

সিকিউরিটি সফটওয়্যার ও ব্রাউজার আপডেট করতে হবে নিয়মিত

বিভিন্ন ভাইরাস, ম্যালওয়্যার ও হ্যাকারদের হাত থেকে ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকার জন্য সব অ্যাপ ও ডিভাইসের সবচেয়ে সুরক্ষিত সংস্করণ ব্যবহারের চেষ্টা করা উচিত। এতে নিরাপত্তা বলয় আরও সুরক্ষিত থাকে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করছেন রাইয়ান ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্রাউজার আপ-টু-ডেট না থাকলে ডিভাইসের বাইরের ডাটা যখন নেটওয়ার্কের বাইরে যায়, তখন হ্যাকারদের হাতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।’

 

ক্লিকবেইটের ফাঁদে পা নয়

সামাজিক মাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন ধরনের ক্লিকবেইট বা থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন থাকে, যেগুলোর অধিকাংশই ভ্যারিফায়েড বা সুরক্ষিত নয়। এসব ক্লিকবেইট অনেক সময় তথ্য চুরি করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে।

 

লোকেশন শেয়ারিং বন্ধ রাখা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় পোস্টের সঙ্গে অনেকে কোনো স্থানে অবস্থানকালেই সেখানকার লোকেশন শেয়ার করে পোস্ট করেন। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট স্টকারদের জন্য লোকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম যদি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রোফাইলে দেখা যায়, তবে দেরি না করে অ্যাকাউন্ট প্রাইভেসি সেটিং ঠিক করতে হবে। ঝুঁকির মাত্রা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার না করা মানে অন্য সবার থেকে পিছিয়ে থাকা। তবে এই পিছিয়ে না থাকার চিন্তায় যেন ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে না পড়ে, এটি নিশ্চিত করা সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরই নিজস্ব কর্তব্য।

 

Share if you like

Filter By Topic