Loading...

মাস্ক পরুন, মাস্কেটিয়ার

| Updated: July 31, 2021 16:34:29


ফাইল ছবি ফাইল ছবি

একটা সময় যখন করোনা নামের নতুন নতুন এই কাঁটাওয়ালা গোলাকৃতি ভাইরাসটি ছড়ানো শুরু করলো, আমরা তখন খুব ব্যস্ত হয়ে মাস্ক পরা শুরু করেছিলাম। আমাদের সচেতনতায়ই হোক, বা প্রকৃতির বিচিত্র কোনো খেয়ালেই হোক, ভাইরাসের প্রকোপ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে এসে একদমই কমে গেল। মাস্ক পরাও আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকল।

এবছর জুলাইয়ের শেষার্ধে এসেই করোনার প্রাবল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এতে এখন রোজ হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, শত শত মারা যাচ্ছে। অথচ মাস্ক পরা অব্যাহত রাখলে করোনার এই ভয়াবহতা থেকে গোটা জাতিকে আজ বাঁচানো যেত। এখন এবং আগামীতেও করোনার মোকাবেলায় মাস্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এ লেখায় আলোচনা হবে - বিভিন্ন মাস্ক এবং মাস্কসদৃশ বস্তু সম্পর্কে, এবং জেনে নেব, এগুলো কোভিড-১৯কে কতটুকু ঠেকায়, বা আদৌ ঠেকায় কি না।

ব্যান্ডানা

পশ্চিমা সিনেমায় দেখা যায়, হিরো-ভিলেনরা ঘাড়ে রুমালের মতো তিনকোণা একটুকরো কাপড় বেঁধে রাখে, ওটাই ব্যান্ডানা। তবে করোনাকালে এর নবতম অবস্থান মানুষের নাকে। হ্যাঁ, আজকাল অনেকেই মাস্কের বিকল্প হিসেবে ব্যান্ডানা ব্যবহার করেন বটে। দেখতে ভালো লাগে, স্টাইলিশ লাগে, দমবন্ধ লাগে না, কাজেই ব্যবহার না করার তো কোনো কারণ নেই।

না, কারণ আছে। ব্যান্ডানা শুধু একখানা কাপড়ের টুকরো বৈ আর কিছুই নয়। নাকের ওপর এজন্যই এটি পরা হয়, যাতে ধুলাবালি আটকায়। কিন্তু ধুলাবালির চেয়ে অনেকগুণ ছোট কোভিড-১৯ ভাইরাস? সেটাকে আটকানো এই ব্যান্ডানার পক্ষে সম্ভব নয়। হাঁচিকাশির সাথে যেসব জলকণা বা ড্রপলেট ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বের হয়, সেগুলোকে ব্যান্ডানা কিছুটা আটকাতে পারে বটে। তাও খুব একটা বেশি নয়।

বাড়িতে তৈরী কাপড়ের মাস্ক

ইদানিং অনেকেই বাড়িতে পরিষ্কার জামা, বা পর্দা দিয়েও মাস্ক বানিয়ে পরছেন। ঘরে তৈরি খাবারের মতো ঘরে তৈরি মাস্কও স্বাস্থ্যসম্মত, এমন মতবাদও তৈরি হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে আবার অনলাইন মাধ্যমেও এসব ঘরে বানানো মাস্ক কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু এই কাপড়ের মাস্কগুলো পরা কতটুকু নিরাপদ?

জার্নাল অব ফ্যামিলি প্র্যাকটিস নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, কাপড়ের মাস্ক যদি এক স্তরের হয়, তাহলে তা বড়জোর ১.০% বহিরাগত বস্তুকণা ছাঁকতে বা ফিল্টার করতে পারে। দুই স্তরের কাপড়ের মাস্কে এই ছাঁকনের পরিমাণটা আরেকটু বেশি, প্রায় ৩৫%। কাজেই, কাপড়ের মাস্ক কিছুটা হলেও সুরক্ষা দেয়ার জায়গা রাখে। বিশেষ করে, মাস্কের কাপড় যদি ভারি সুতির কাপড় হয়, তাহলে হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় আপনার মুখের যে ড্রপলেট আট ফুট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ত, সেটা কমে আসে মাত্র আড়াই ইঞ্চি জায়গার মধ্যে। কাজেই কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে বেশি ঘনত্বের সূতির মাস্ক ব্যবহার করুন, এবং চেষ্টা করুন দুই বা তিন স্তরের মাস্ক তৈরি করে পরার।

দোকানের কাপড়ের মাস্ক

আজকাল নানা দোকানেও হরেক রকমের মাস্ক দেখা যাচ্ছে। নানান রকম ডিজাইন, আঁকিবুকি করা এসব মাস্কের বেশিরভাগই আবার কাপড়ের তৈরি। বাণিজ্যিকভাবে তৈরী এই মাস্কগুলো কতটুকু নিরাপদ?

বাড়িতে বানানো মাস্কের মতোই দোকানের মাস্কের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। মাস্কগুলো যদি তিন স্তরের হয়, আর শক্তভাবে বোনা সূতির কাপড়ের তৈরি হয়, তাহলে চাইলে সেগুলো নেয়া যেতে পারে। সাধারণত, দোকানের একটি সাধারণ মাস্ক বেশি হলে ৫০% ক্ষুদ্র বস্তুকণা ছাঁকার কাজ করে। খুব ভালো মাস্কগুলো হয়তো ৮০-৮৫% পর্যন্তও ছাঁকতে পারে, কিন্তু নিম্নমানের মাস্কগুলো ১০%ও ছাঁকে কি না, সন্দেহ আছে!

ডিসপোজেবল সার্জিক্যাল মাস্ক

২০১৩ সালে অ্যারোসল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়, সার্জিক্যাল মাস্ক নামের নীল-সাদা রঙের এই পাতলা, কাগুজে বস্তুতে তৈরি মাস্কটি নিঃশ্বাসের বাতাস থেকে প্রায় ৬০% বস্তুকণা ছেঁকে আলাদা করতে পারে। সাধারণভাবে এরা ড্রপলেট বা জলকণা, হাঁচিকাশির সাথে আসা লালার কণা ইত্যাদি প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া গবেষণা এ-ও বলে যে, উন্মুক্ত স্থানে ডিসপোজেবল সার্জিক্যাল মাস্ক পরলে যেকোনো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।

কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্কটি বেশ কার্যকর। আপনি চাইলে আপনার বাসায় বানানো বা কেনা কাপড়ের মাস্কের নিচে এই মাস্কগুলো পরতে পারেন বাড়তি সুরক্ষার জন্য। তবে মনে রাখতে হবে, যে, এই মাস্কগুলো শুধুমাত্র একবারই ব্যবহারের জন্য তৈরি।

এন৯৫, কেএন৯৫ ও অন্যান্য রেস্পিরেটর

এন৯৫ বা কেএন৯৫ জাতীয় মাস্কগুলোকে আসলে সেই অর্থে মাস্ক বলা যায় না, এদের বলা হয় রেস্পিরেটর। এন৯৫ মাস্কগুলো পরিধানকারীকে খুবই ভালো সুরক্ষা দেয়, কারণ এরা বাতাস থেকে ৯৫% ক্ষুদ্র বস্তুকণাই ছেঁকে আলাদা করে নিতে পারে। আমেরিকার সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) এর ভাষ্যমতে, এই মাস্কগুলো পরিধানকারীর সাথে সাথে অন্যান্য মানুষকেও সুরক্ষা প্রদান করে।

কেএন৯৫-ও এন৯৫-এর থেকে আলাদা কিছু নয়। এরা উভয়েই ৯৫% ছাঁকনের কাজ করতে পারে।  এই দুই মাস্কের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে, এন৯৫ তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যের মানদণ্ড অনুসারে, অন্যদিকে, কেএন৯৫ তৈরির মানদণ্ডটি হচ্ছে চীনা।

এছাড়া আরও আছে এন৯৯ রেস্পিরেটর (৯৯% ছাঁকনক্ষমতার), এন১০০ (৯৯.৯৭% ছাঁকনক্ষমতার) আর৯৫ (৯৫% ছাঁকনক্ষমতার এবং তেল প্রতিরোধক), পি৯৫, পি৯৯ ও পি১০০ (যথাক্রমে ৯৫%, ৯৯% ও ৯৯.৯৭% ছাঁকনক্ষমতাযুক্ত) ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের মাস্ক।

মাস্কেটিয়ার মানে জানেন তো? সৈনিক। হ্যাঁ, এই করোনাযুদ্ধে আপনিও একজন সৈনিক, মাস্কেটিয়ার। আর আপনার বন্দুক বা মাস্কেট হচ্ছে আপনার মাস্ক। অতএব যুদ্ধে যাবার আগে অস্ত্র নিতে ভুলবেন না যেন! নিজে মাস্ক পরুন, পাশেরজনকেও বারবার মাস্ক পরতে বলুন।

শুভদীপ বিশ্বাস বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ, তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। [email protected]

Share if you like

Filter By Topic