Loading...

ব্যর্থতা পেরিয়ে এবার গা ঝাড়ার প্রস্তুতিতে বিএনপি

| Updated: August 19, 2022 17:28:53


ব্যর্থতা পেরিয়ে এবার গা ঝাড়ার প্রস্তুতিতে বিএনপি

গত এক দশক ধরে বিএনপির আন্দোলনে ব্যর্থতাই দেখে এসেছেন কুমিল্লার ছাত্রদলকর্মী আল আমীন মোহাম্মদ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য রকম ঠেকেছে তার কাছে।

“আমাদের একটাই পথ রাস্তায় নামা। পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড-থানায় সবাই আমরা একাট্টা হলে এবারের আন্দোলনে সরকারের খবর আছে,” বললেন আল আমীন।

তার মতো আশাবাদী বিএনপির শীর্ষ নেতারাও। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরে কথায় স্পষ্ট, এখন রাজপথকেই পাখির চোখ করেছেন তারা।

১৯৯১ সালের পর পাঁচ বছর করে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও একটানা গত দেড় দশক ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। আর এই সময়ে ক্ষমতায় তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। 

২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে সরকার পতনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি; সফল হয়নি। এরপর ২০১৮ সালে ভোটে গিয়েও আওয়ামী লীগকে হারাতে পারেনি।

এরমধ্যে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে দেখেছেন জিয়াউর রহমানের গড়া এই দলটির কর্মীরা। তাকে মুক্ত করতে আন্দোলনও নিস্ফল ছিল।

ফলে বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে খোঁচা দিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তবে এখন আন্দোলনে জয়ের সম্ভাবনা কেন দেখছেন- সেই প্রশ্নে নীলফামারীর বিএনপিকর্মী মোতাব্বের আলী বলেন, “যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মানুষজন কষ্টে আছে।”

মহামারীর পর ইউক্রেইন যুদ্ধ যে বৈশ্বিক সঙ্কট তৈরি করেছে, তা প্রায় সব দেশের সরকারকেই সমস্যায় ফেলেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সঙ্কট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারগুলো। এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরে দ্রব্যের মূল্যে বেড়েছে, বেড়ে গেছে পরিবহন ব্যয়। এমন কোনো জিনিস নেই যে দাম বাড়েনি। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

“তারা উন্নয়নের নামে একদিকে বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে এবং পদে পদে সেসব প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে সেখান থেকে লুটপাট করছে। পরিস্থিতি যেখানে যাচ্ছে, রাজপথে আন্দোলন ছাড়া আর কি বা করার আছে।”

ছাত্রদলকর্মী আল আমীন বলেন, “আমরা যদি রাস্তার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারি, আমরা যদি সকলে গোড়ালি শক্ত করে রাস্তায় নামতে পারি, এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।”

আর বিএনপিকর্মী মোতাব্বের বলেন, “আন্দোলন হতে হবে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে। গ্রামের মানুষজনের মতো শহরের মানুষজনকে রাস্তায় নামানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

মোতাব্বের নীলফামারী থেকে আর আল আমীন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে বিএনপির সাম্প্রতিক কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাতে জনসমাগম দেখে তারা প্রেরণা খুঁজে পাচ্ছেন।

জাতীয় নির্বাচনের আরও দেড় বছর বাকি থাকতে এই কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিএনপিও ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চাইছে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমাদেরকে অবশ্যই দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় থাকতে হবে।”

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারা পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই যে সংসদ আছে তাকে বাতিল করতে হবে এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।”

সেজন্য রাজপথে আন্দোলনে জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তা (পদত্যাগ) না হলে রাজপথের আন্দোলনেই তাদের পতন ঘটানো হবে। আন্দোলন ছাড়া বিএনপির কাছে অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। সরকার পদত্যাগ না করলে আমরা একদফার পথেই যাব।”

শহর-গ্রাম সব এলাকায় সমন্বিত আন্দোলনের যে প্রত্যাশা কর্মীদের রয়েছে, তাতেও গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বিএনপির ৮৩টি সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে, এগুলোর অধীনে রয়েছে অনেক ইউনিট। সবগুলোতে দ্রুত কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে।

বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলের কাজ প্রায় শেষ দিকে। এরপর হবে উত্তর ও দক্ষিণের কাউন্সল।

৮৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজও চলছে। অধিকাংশ জেলায় পুরনো কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।

মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলের তৃণমূল স্তরে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজও চলছে।

দল গোছানোর পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনের জন্য মিত্রও বাড়াচ্ছে বিএনপি। তবে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিষ্ক্রিয় রেখে এই জোটের দলগুলো এবং আরও দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালনের দিকে বিএনপি এখন মনোযোগী।

দলগুলোকে বিএনপির কাছাকাছি আনতে টানা সংলাপও করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Share if you like

Filter By Topic