Loading...

বঞ্চনা না থামলে শান্তি আসবে না: প্রধানমন্ত্রী

| Updated: June 24, 2021 18:58:57


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

বলপূর্বক বাস্তচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার নবম মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “মানুষের বঞ্চনা বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ যদি আমর নিতে না পারি, সবার জন্য শিক্ষা ও বিকাশের পরিবেশ যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।”

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে দমন অভিযান শুরু করলে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এরপর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলেছে জাতিসংঘ।

তার আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছিল। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে নিপীড়িত এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি হচ্ছে।

“মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে অনির্দিষ্টকাল এভাবে আশ্রয় দিয়ে রাখা সম্ভব না।

“বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাই আমি অনুরোধ করব, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আমাদের সহযোগিতা করুন।”

কোভিড-১৯ মহামারীকে বর্তমান সময়ের ‘সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এটা শুধু বিপুল মৃত্যু ডেকে আনেনি। অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে, সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”

সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

দেশের সকল নাগরিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে।

“আমাদের সরকার টিকার জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের জানাতে চাই, ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতাও বাংলাদেশের রয়েছে। আমাদের যদি ভ্যাকসিন উৎপাদনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কেও সহায়তা দিতে পারব।”

জলবায়ু সঙ্কটকে বর্তমান সময়ের আরেকটি বড় সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ‘যথাযথ মনোযোগ’ দেওয়া প্রয়োজন।

“যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। অথচ যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাংলাদেশ তার একটি।”

জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময় এবং সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বিরোধী যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি করেম সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সামরিক হুমকির পাশাপাশি ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট, গণ অভিবাসন, পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং অন্যান্য অপ্রচলিত নিরাপত্তা হুমকিও আজকের বিশ্বে নিরাপত্তার ধারণার অন্তর্ভুক্ত।

“এমনকি সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, বিছিন্নতাবাদ, ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র, সাইবার অপরাধ, আঞ্চলিক কোন্দল এবং পরিবেশগত বিপর্যও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।”

এক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য অংশেও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে, আমি এ আশাই করি।”

বিশ্ব সম্প্রদায়কে কোভিড-১৯ যুদ্ধে সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা, অসহায় মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন, সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা বন্ধ করা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামরিক সংস্থারগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Share if you like

Filter By Topic