পকেটের নয়, জীবনের অর্থ খুঁজি


সঞ্জয় দত্ত | Published: April 15, 2021 20:06:51


পকেটের নয়, জীবনের অর্থ খুঁজি

আর্থিক অনটন নেই, বিলাসী জীবন যাপনেও নেই এতটুকু অনিশ্চয়তা, তবু ভেতরে কী নেই কী নেই শূন্যতা। এক মহা অপ্রাপ্তিমুখর হাহাকার। কিন্তু কেন? কীসের অভাব?
ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে একটি লাইন উদ্ধৃত করে নেওয়া যাক। ‘ঘরে যদি না থাকে ঘর, তবে ঘরও চর ঘরও চর।’ পৃথিবীর সব অভাবের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অভাবের নাম—‘স্ব অভাব’। অর্থাৎ, নিজের মধ্যে নিজের অভাব। কেবলমাত্র এই একটি কারণেই অধিকাংশ মানুষ বাহ্যিক সুখ খুঁজে পেলেও ভেতরে ভেতরে মরে যায় প্রতিনিয়ত।
আমরা আমাদের আজকের লেখায় আলোচনা করব এমন কিছু কথা, যা স্পষ্ট করবে, কেন ব্যক্তির উচিত পকেটের নয়, জীবনের অর্থ খোঁজা।

দীর্ঘমেয়াদি সুখবোধ
এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই বেশি, অর্থ নেশায় যারা নিজেও জানে না, আদতেই তারা কী করে। এই অজ্ঞতার একমাত্র কারণ, তারা যা করে, তা কোনোকালেই তাদের পছন্দের কিছু ছিল না। এর ফলাফল হিসেবে শেষতক জোটে হাহাকার। আসলে ভালো লাগার কাজে অনেক সময় কষ্টগুলোকেও খুব সুন্দর বলে ভাবা যায়। হয়তো ব্যক্তি তার পছন্দের কাজে প্রথমদিকে খুব বেশি অর্থ না-ও পেতে পারেন, কিন্তু ভালো লাগা ঠিকই দীর্ঘমেয়াদি সুখের দিকে নিয়ে যায় তাকে।

উর্বর সৃজনশীলতা
পছন্দের কাজে মনোনিবেশ করতে পারলে, নিজেকে নতুন নতুন নানাবিধ আবিষ্কারে সংযুক্ত করা যায়। জবরদস্তির কোনো কাজে ব্যক্তি কখনোই নিজের সৃজনশীল সত্তার বিন্দু পরিমাণ ব্যবহার ঘটাতে পারেন না।

মনের তাড়না
কাজ যদি এমনটা অনুভব করায় যে, তা কাজ, তবে তা কখনোই স্বস্তি দিতে পারে না। আসলে পছন্দসই কোনো কাজ কখনোই খুব কঠিন মনে হয় না। বরং, ভেতর থেকে একধরনের তাড়না কাজ করে-কর্ম সমাপনের জন্য। তাই ব্যক্তি খুব আনন্দের সঙ্গে কাজটি নিমেষেই সমাপ্ত করতে পারেন।

অবসাদ বিয়োগে
ব্যক্তি যখন তার পছন্দের বাইরে গিয়ে স্রেফ অর্থের প্রয়োজনে কোনো কাজ করেন, তখন খুব সহজেই অবসাদ তাকে গ্রাস করে। আর তা কখনোই তাকে শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে সামনে এগোতে দেয় না। তাই, জীবনকে অবসাদ থেকে দূর করতে, অবশ্যই ‘মন আসা কর্মকে ধর্ম করা’ উচিত।

অনুপ্রেরণা
অনুপ্রেরণা-জীবনের এমন এক উপাদান, যা ব্যক্তিকে সব সময়ই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কেউ যখন তার ভালো লাগার কাজের পথে হাঁটতে শুরু করে, তখন প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা বাড়ে বৈ কমে না। এতে করে ব্যক্তির নিজস্ব উন্নতির স্কেলও তরতর করে দীর্ঘ হতে থাকে।

সাহসী আচরণ
মন থেকে চাওয়া যেকোনো কিছুতে মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি সাহসীভাবে উপস্থাপন করতে পারে। তখন যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকে নিতান্তই মামুলি বলে মনে হয়। ফলস্বরূপ, হাজারো বাধাবিপত্তি সামলে মানুষ তার প্রতিভাকে উচ্চতায় ঠাঁই করে দিতে পারে।

লক্ষ্য নির্ধারণ
পছন্দসই কাজের যাত্রায় পা চালানো ব্যক্তির সব সময়ই একটি লক্ষ্য থাকে। যে লক্ষ্যের তাড়নায় ব্যক্তি প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রস্তুত করেন এবং সামনে এগিয়ে যান। আর যখন কোনো কাজের জন্য দীর্ঘকালীন প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তি তার লক্ষ্য হাসিলে মজবুত হন এবং তা অর্জন করে পৃথিবীকে সুন্দর কিছু দিতে পারার অবকাশ পান। টাকা রোজগারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কারওরই কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই টাকা রোজগারই যেন মুখ্য লক্ষ্য না হয় জীবনের, জীবনের লক্ষ্য যেন তার চাইতেও বহুগুণ উঁচু হয়-সে ভাবনা রাখাটা দরকারি।

চাপমুক্ত থাকা
ইচ্ছের বাইরে গিয়ে ব্যক্তি যখন কোনো কাজে নিজেকে ব্যবহার করেন, তখন খুব অল্পতেই ভেতরে এক প্রকার চাপ অনুভূত হয় যা সেই কাজটি সম্পাদনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তাই, ভেতর থেকে চাপমুক্ত থাকতে এবং খুব আনন্দে কর্মজীবনকে উপভোগ্য করে তুলতে চাইলে অবশ্যই পছন্দের কাজে মনোযোগী হওয়া দরকার।

অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা
এমন নয় যে, ভালো লাগার কাজে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকে না। বরং, কেউ যখন তার পছন্দ মোতাবেক কর্মক্ষেত্র বেছে নেন, তখন ধীরে ধীরে তার পদোন্নতির সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। কারণ, উক্ত কাজে ব্যক্তি তখন নিজেকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার আগ্রহ পান, যার ফলে খুব সহজেই উন্নতির পাল্লাও ভারী, আর তার সঙ্গে অর্থেরও।

জীবনকে বিষিয়ে তোলার চাইতে; জীবনকে জীবনে রেখে আমোদে কাটিয়ে দেওয়া খুব বেশি সহজ। বিষিয়ে তোলা নয়, বরং আত্মা থেকে আসা প্রতিটি চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, জীবনকে জীবনে ঠাঁই দিতে পারলে, খুব অনায়াসে পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে সুন্দরতম একটি গ্রহের উদাহরণ। আর প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠতে পারে আরও বেশি মৌলিক, আরও বেশি দুর্দান্ত আবিষ্কারের মূল চালিকাশক্তি।

সঞ্জয় দত্ত ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
ই-মেইল: sanjoydatta 0001 @gmail. com

Share if you like