ঋতু অনুযায়ী আমাদের শরীরের চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই সব ঋতুতে একই ধরনের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তার খাবারের মাঝে তেমন পরিবর্তন আনতে ইচ্ছা পোষণ করে না। তবে শারীরিক সুস্থতার জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করা খুব প্রয়োজন।
আমাদের দেশে ছয়টি ঋতু থাকলেও মূলত তাপমাত্রার ভিত্তিতে তিন ধরনের ঋতু বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। যা হলো: গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীতকাল। বছরের এই সময়গুলোতে পরিবেশে চোখে পড়ার মতো কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বেশিরভাগ যে পরিবর্তনটি লক্ষ করা যায়, তা হলো তাপীয় তারতম্য। সূর্যের বিভিন্ন অবস্থানের জন্য তাপমাত্রাজনিত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যার প্রভাব আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রে দেখা যায়। তাই ঋতুভেদে এই আবহাওয়াজনিত পরিবর্তন আমাদের খাদ্যাভ্যাসের মাঝে কিছু পরিবর্তন আনে। আজকের এই লেখায় গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীতের ভিত্তিতে কখন কোন ধরনের খাবার আমাদের গ্রহণ করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
গ্রীষ্মকাল
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরো বেশি। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা বছরের অন্যান্য সময় থেকে বেশি থাকে। তাই শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। পানির ঘাটতি দেখা দিলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। এজন্য গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া মোকাবেলা করার জন্য দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
তাছাড়া গরমের সময় শরীর যত বেশি সম্ভব ঠাণ্ডা থাকতে চায়। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক পিটার সি হারম্যানের মতে, গরমের সময় শরীর শীতল রাখার জন্য মানুষ পরিমাণে কম ও শীতল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে বেশি পছন্দ করে। তিনি মনে করেন, এটি মানুষের শরীরের তাপমাত্রায় ভারসাম্য বজায় রাখবার একটি কৌশল। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, যেমন: পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া সালাদ এবং গ্রীষ্মকালীন ফল, যেমন: আম, কাঁঠাল, তরমুজ, অ্যাভোক্যাডো খাওয়া যেতে পারে। এসময় তাপমাত্রা অধিক হওয়ায় শরীরের তাপ হারানো বেশ কষ্টসাধ্য। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সময়ে কম ক্যালরিবিশিষ্ট খাবার খাওয়া উচিত। যত বেশি সম্ভব পানি এবং যে সকল খাবারে পানির পরিমাণ বেশি, সেগুলো গ্রহণ করা উচিত। এগুলোর মধ্যে ডাবের পানি ও তরমুজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া, পেয়ারা, জাম, লেবুও শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে, যতই গরম লাগুক, সোডাজাতীয় বা কার্বোনেটেড কোমল পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত রাখা উচিত।
বর্ষাকাল
বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন তাপমাত্রা গ্রীষ্মের তুলনায় কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এ সময় অনেকের সর্দি-কাশির মতো ঠাণ্ডাজনিত নানান রোগ-ব্যাধি হয়ে থাকে। এসময় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিশিষ্ট খাবার বেশি খাওয়া উচিত। তাই বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি এ সময়ে খাবারের তালিকায় যোগ করা যেতে পারে। বীজ বা আঁটিযুক্ত ফল এক্ষেত্রে বেশ উপকারী। তাছাড়া, আম, জাম, আপেল, নাশপাতি, কাঁঠাল, অ্যাভোক্যাডো ও লিচু সহ বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে তৈরী কাস্টার্ড খাওয়া যেতে পারে।
শীতকাল
গ্রীষ্ম ও বর্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা যায় শীতকালে। তাপমাত্রা থাকে কম, আবহাওয়া থাকে শুষ্ক। শরীরে পানির চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কমে যায়। দেহে অতিরিক্ত তাপ থাকে না। এজন্য শরীর ঠাণ্ডা রাখে, এমন খাবারের চাহিদা এ সময় কমে যায়। তাই দেহের তাপমাত্রা শীতল রাখে, এমন খাদ্য খাওয়ার প্রয়োজন নেই। শীতকালে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিভিন্ন ধরনের শাক, সরিষা, বিভিন্ন ধরনের শিম, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মেথি শাক ইত্যাদি।
ফলের মধ্যে, আমড়া, জাম্বুরা, কমলা খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এসময় শরীরের তাপমাত্রা কম থাকায় ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে। ক্যালরি বৃদ্ধির জন্য মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো আমিষ জাতীয় খাদ্য এবং পরিপাক হতে একটু বেশি সময় নেয়। তাই শীতকালে এ ধরনের খাবার গ্রহণ করা বেশি দরকার। অনেকেই হাঁসের মাংস খুব পছন্দ করেন। হাঁসের মাংস খাওয়ার জন্য এটি উপযুক্ত সময়। ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র জন্য তাই ভাতের কথা আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। তবে স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভাত বা রুটির তুলনায় শাক-সবজি ও ফল বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
সবধরনের খাবারই এখন মোটামুটি বারোমাস বাজারে পাওয়া যায়। ঋতুভেদে শরীরের চাহিদা ভিন্ন হয়, তাই জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, খাবারের তালিকাও সে অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। গ্রীষ্মের অত্যাধিক গরমে আপনি ডাবের পানি পান করবেন নাকি গরম গরম খিচুড়ি খাবেন, সেটা ঠিক করে নিতে হয়তো আর অসুবিধা হবে না। খাওয়াদাওয়া যেমনই হোক, জীবনযাপন হোক স্বাস্থ্যসম্মত।
মোঃ ইমরান খান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।