Loading...

অবহেলায় মৃত্যুর মামলা ঢাকার  তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে, তদন্তের নির্দেশ  

| Updated: June 20, 2021 21:08:15


-- ডা. তৌফিক এনাম -- ডা. তৌফিক এনাম

‘চিকিৎসার অবহেলায়’ এক চিকিৎসকের মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকার তিনজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।

এভার কেয়ার হাসপাতলের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌফিক এনামের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা আক্তারুজ্জামান মিয়া রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী বাদীর জবানবন্দি শুনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সুপারকে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন জানান।

কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব খান (ল্যাপারোস্কপিক সার্জন), ল্যাব এইড হসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এবং বিআরবি হাসপাতালের হেপাটো বিলিয়ারি সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে এই তিন চিকিৎসকের কারও বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন জানান, গত ৩০ মে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. তৌফিক এনামের মৃত্যু হয়।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, তৌফিক এনাম অসুস্থ হলে গত ৪ মে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. আব্দুল ওহাব খানকে দেখান। তার অধীনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ার কথা জানানো হয়। ৫ মে ডা. ওহাব অস্ত্রোপচার করেন। পরদিন ডা. তৌফিক এনামকে ছাড়পত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু ৯ মে তৌফিক এনামের অবস্থার অবনতি হলে তারা ডা. ওহাব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জরুরি ভিত্তিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মামুন আল-মাহতাব স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

আর্জিতে বলা হয়, ডা. স্বপ্নীল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের বলেন, গলব্লাডার অপারেশনের সময় ‘ভুল জায়গায় ক্লিপ’ লাগানো হয়েছে। এরপর ডা. স্বপ্নীল `ইআরসিপি উইথ স্টেন্টিং’ করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে বিআরবি হাসপাতালের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠান।

এরপর ডা. মোহাম্মদ আলী গত ১২ মে রোগীকে বিআরবি হাসপাতাল ভর্তি করান এবং জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করার কথা বলেন।

মামলায় বলা হয়, ৩০ মে বিআরবি হাসপাতালে তৌফিক এনামের অস্ত্রোপচারের সময় তার বাবাকে প্রথমে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়। তিন ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করার পর আরও চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ আলী।

এরপর হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাদীর স্বজনদের ‘কথা কাটাকাটি হয়’। এর মধ্যে এক পর্যায়ে ডা. তৌফিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আর্জিতে বলা হয়, “অভিযুক্তরা অর্থলোভী। তারা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা নেওয়ার জন্য ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করে হাসপাতালে সন্ত্রাসী মাস্তান রেখে জোর করে টাকা আদায় করে।”

শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বাদী তার ছেলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।

আর্জিতে বলা হয়, “ডাক্তার তৌফিক এনাম বার বার বলছিলেন যে, ‘ভুল চিকিৎসা হচ্ছে, আমাকে এখান থেকে পিজি (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল) হাসপাতালে নিয়ে যাও।’ কিন্তু ৩ নম্বর আসামি ড. মোহাম্মদ আালী  রোগীর বাবা মা কাউকে কোনো পাত্তা দেননি। তারা জোর করে অপরেশন করার পর রোগী মারা যায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা ক্ষমা চান।” 

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক), ৩৮৬, ৪০৬, ৪২০ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিও আবেদন করেন বাদী। তার আর্জিতে মোট আটজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

ডা. তৌফিক এনামের বাবা আক্তারুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন তিনি নিজে একজন ফিজিও থেরাপিস্ট। ৫ নম্বর সাক্ষী  মেহেবুবা সুলতানাও একজন চিকিৎসক।

 

Share if you like

Filter By Topic